রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ । এবারের বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৩.৬২ শতাংশ বা ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা , যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৫.২ শতাংশ । মূলত চড়া সুদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে লক্ষ্যমাত্রা সীমিত রাখা হচ্ছে । তবে এবার এ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম অস্ত্র হতে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য , যার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন খাত থেকে কর অব্যাহতি কমিয়ে । এবার জাতীয় বাজেট পবিত্র ঈদুল আজহার আগে আগামী ২ জুন ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । কারণ , ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ।
বাজেট ঘোষণার পরদিন অর্থ উপদেষ্টা ড . সালেহউদ্দিন আহমেদ রেওয়াজ মেনে বাজেট - পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন । জাতীয় সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট টেলিভিশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা । বাজেট কার্যকর করতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি করা হবে , যা বর্তমান ব্যবস্থার আওতায় অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে । নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ শতাংশ । চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার । চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল । তবে চলতি বছরের এপ্রিলে পয়েন্ট ট পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক টু মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ । অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে কর ব্যবস্থায় থাকবে বড় সংস্কার – কর ও নীতির পৃথক্করণ , ভ্যাট কাঠামোর বাস্তবায়নযোগ্য সম্প্রসারণ এবং এনবিআর অবকাঠামোয় অটোমেশন জোরদার করা । সেই সঙ্গে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ এবার পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে , যদিও রেজিস্ট্রেশন খাতে করহার কিছুটা কমিয়ে তা নিরুৎসাহিত করার কৌশল রাখা হতে পারে । আসছে বাজেটে সংযমের বার্তা আরও স্পষ্ট হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ( এডিপি ) কমিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণে, যা আগের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম । চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা । তবে এই কাটছাঁটের মধ্যেও কৃষি , শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কাটছাঁটের মধ্যেও কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছুটা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে । বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি সংকোচন করে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে , যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম ।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে , অব্যবহৃত সক্ষমতা ও অকার্যকর প্রকল্প এই সংকোচনের মূল কারণ । তবে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের প্রথম ইউনিট চালু করা হবে নতুন অর্থবছরের মধ্যভাগে । এটি বাজেটে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হিসেবে জায়গা পাচ্ছে । ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো . হাফিজুর রহমান আশা করেন , আগামী বাজেট এলডিসি - উত্তর বাস্তবতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বিবেচনায় স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিবেশ গড়তে ভূমিকা রাখবে । সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই করা হচ্ছে বাজেটের কল্যাণচিন্তা ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে , যা কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে , যা বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ । এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে সুদ বাবদ ব্যয় খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা । এটিসহ আরও কিছু কর্মসূচি সংস্কার পদক্ষেপের আওতায় বাদ যাওয়ায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হতে পারে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা , যা যেকোনো খাত বিবেচনায় সর্বোচ্চ । তবে এতে খাদ্য সহায়তা , নগদ ভাতা এবং বৃদ্ধ ভাতা কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করে প্রকৃত দাবিদারদের আওতায় আনার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে । ভাতার পরিমাণ না বাড়লেও অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতা বাড়ানোই এবার মূল লক্ষ্য । সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে মহার্ঘ ভাতা । আনুপাতিক হারে প্রযোজ্য মহার্ঘ ভাতা বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে চাহিদা মেটানোর জন্য গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ।
অন্যদিকে , বেসরকারি খাতকে চাঙা রাখতে দেওয়া হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব সুবিধা , বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উপযোগী প্রণোদনা । আগামী বাজেট বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ( সিপিডি ) নির্বাহী পরিচালক ড . ফাহমিদা খাতুন বলেন , ‘ এটি অর্থনৈতিক বাস্তবতা মেনে নেওয়ার একটি ইঙ্গিত , যা ভবিষ্যতে আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক হবে । এসএমই খাতে এবার থাকবে নতুন ধারা । প্রণোদনার অংশ হিসেবে করছাড় , সহজ শর্তে ঋণ এবং প্রশিক্ষণ প্যাকেজের ঘোষণা আসতে পারে । এ খাতকে বাজেট বক্তৃতায় ‘ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতির কেন্দ্রবিন্দু ’ হিসেবে আখ্যায়িত করার চিন্তাও রয়েছে । বিদ্যমান তহবিল বাড়ানোর পাশাপাশি জাতীয় এসএমই ডেটাবেইস হালনাগাদ করার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে । অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড . ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন , ‘ বাজেট রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা নয় ; বরং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং কাঠামোগত রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে । '