
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের বিষয়ে আগামীকাল বুধবার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে দুই দফা শুনানি হয়। পরে বুধবার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করে দেন।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।
শুনানিতে রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে মামলার সময়ে ইশরাককে জয়ী ঘোষণা করতে হবে সেই মর্মে কোনো প্রতিকার চায়নি। একই সঙ্গে ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছে, সেরকম কোনো কিছুই আবেদনে ছিল না। বরং আবেদনে ভোটের ফলাফলে ইশরাক কম ভোট প্রাপ্ত হয়েছে মর্মে উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে ইশরাকের আবেদনে দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। যা আইনসম্মত নয়। কারণ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলায় কোনো আবেদন ৩০দিন পর সংশোধন করা যায় না। এটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে কোনো আবেদন মামলার পক্ষ বা তার এজেন্ট (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে) অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে সংশোধন করতে পারে। কিন্তু ইশরাকের মামলায় সংশোধন আবেদন করেছেন রাজিব বেপারী নামে বরিশালের এক ব্যক্তি। আরেকটি সংশোধনী আবেদন করেন একজন আইনজীবীর ক্লার্ক মনজুরুল ইসলাম। অথচ কোনো পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নেই। সুতরাং এই অ্যাফিডেভিট গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তবুও আদালত তা গ্রহণ করে আদেশ দিয়েছেন। এই সংশোধনী অবৈধ, রায়ও অবৈধ।’
আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘মামলার আবেদনে যে সকল সাক্ষীদের নাম উল্লেখ ছিল তাদের কাউকেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে মামলায় ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে কমিশনের মাধ্যমে। ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনে বসে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। কমিশন নিয়োগের দরখাস্তে বলা হয়েছিল ইশরাক অসুস্থ। অথচ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য কমিশনে কেন নেওয়া হয়েছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আর সাক্ষীরা ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে যেতে পেরেছেন, কিন্তু আদালতে যেতে পারেননি। ইশরাক বেশি ভোট পেয়েছেন বা জয়ী হয়েছে মর্মে আদালত তাঁর রায়ের কোথাও উল্লেখ না করেই মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যা আইনসম্মত নয়।’
প্রশাসক নিয়োগের কথা উল্লেখ করে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটিসহ সব সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। তাই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাটি তখনই অকার্যকর হয়ে যায়। তারপরও ট্রাইব্যুনালের রায় প্রদান এখতিয়ার বহির্ভূত। আদালত ভোট পুনর্গণনা ব্যতীত কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন না। অথচ এখানে পুনর্গণনার আদেশ না দিয়ে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে জবাবের জন্য অপেক্ষা করেনি। আমরা একটা নোটিশ দিয়েছি বিকেলে, রাতেই গেজেট করে দিয়েছে।’
এদিকে ইশরাকের পক্ষে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আদালতের রায়ের পর গেজেট হয়ে গেছে। তারা শপথ পড়াতে বাধ্য। এই রিটকারীর রিট করার আইনগত এখতিয়ার নেই। রিট খরচসহ খারিজ চাই।’
আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রয়েছে। সেখানে না গিয়ে রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করা হচ্ছে। এটি একটি হাইলি পলিটিক্যাল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, আবেদনকারীর রিট করার আইনগত এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান বলেন, এটা জনস্বার্থে মামলা হয় না। পরে আদালত পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় দিন সময় নির্ধারণ করে দেন।
এর আগে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও ইসির গেজেট প্রকাশ নিয়ে মো. মামুনুর রশিদ নামের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী লিগ্যাল নোটিশ দেন। তবে তাতে সাড়া না মেলায় ১৩ মে রিট করা হয়। রিটটি মঙ্গলবার শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। বেলা ১টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরে বিকেল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা শুনানি হয়।