Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)’-এর ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়ে সোমবার (১৯ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেড় বছর আগে নিজ ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি। এ ঘটনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাদা দলের এই অধ্যাপক।

জানা যায়, ২০২৩ সালের শেষের দিকের এই যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি’। পরে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছিল এবং তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছিল। এই সময়ে তাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছিল।

 

এদিকে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর হাইকোর্ট থেকে রায় (বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের) এনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বিএনপি-জামায়েতপন্থী সাদা দলের এই শিক্ষক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সমালোচনা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এই অধ্যাপক একটি নয়, একাধিক যৌন হয়রানিতে জড়িত ছিলেন। সরকারের পরিবর্তন না হলে তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়েই ফিরতে পারতেন না। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও হলেন।  বড় পুরস্কার দিয়েছে সরকার।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের তদন্ত কর্মকর্তা (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) শেখ আইয়ুব আলী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি’র তদন্তের পর তাকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তিনি কোর্টের রায় নিয়ে এসেছেন এবং রায়ে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেটি সঠিক হয়নি। সেজন্য তাকে যোগদানের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়রে প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির রায় চ্যালেঞ্জ করে ৫ আগস্টের পর হাইকোর্টে যান এই অধ্যাপক।  সেখানে তার পক্ষে রায় আসলে, সেটির কপি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিলে তা সিন্ডিকেটের সভায় উঠে। পরে রায় পর্যালোচনা করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কেননা কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তবে একইসঙ্গে তার তদন্ত কাজ চলবে বলে জানায় সূত্রটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামের ২ বছরের বেশি চাকরির সময় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর আগে হয়তো এসব অভিযোগ থেকে এড়িয়ে থাকতে তিনি ইউডার ভিসি হয়ে চলে যাচ্ছেন। যদিও এর আগে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে তার ফাইল মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল। তবে যৌন হয়রানির বিষয়টি জানাজানি হলে তা বাদ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামকে মুঠোফোন কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। 

 

এর আগে গত ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর এক নারী শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন ও আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করার অভিযোগ উঠে অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বিষয়টি উল্লেখ করে ২৮ নভেম্বর উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই নারী শিক্ষার্থী। পরে এ নিয়ে আন্দোলনেও নামেন শিক্ষার্থীরা।

পরবর্তীতে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করলে অধ্যাপক নুরুলের যৌন নিপীড়নের সত্যতা পায়। এরপর ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সিন্ডিকেট থেকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়।