Image description

কালো টাকা সাদা করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব সুযোগ অধ্যাদেশের মাধ্যমে চিরতরে বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি অন্যান্য দুর্নীতি-সহায়ক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক বিধান অনতিবিলম্বে বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবি মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। স্বাধীন বাংলাদেশে ২১ বার এ সুযোগ দেওয়া হয়। বিভিন্ন সরকারের আমলে বারবার দেওয়া এ অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক সুবিধা সৎকরদাতাদের নিরুৎসাহিত করে, দুর্নীতিকে পুরস্কৃত করে এবং দুর্নীতির বিস্তার ঘটায়। গত অর্থবছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সর্বশেষ বাজেটেও বিনা প্রশ্নে তা বহাল ছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল ঘোষণা করে। এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানায় টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধের প্রতিশ্রুতি আমাদের আশান্বিত করেছে। তবে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আয়কর আইনে অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার নামে কালো টাকা সাদা করার তিনটি বিধান এখনও বিদ্যমান। এসব বিধান প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে চিরতরে বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।’

বিবৃতিতে তিনটি বিধানের উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ প্রদর্শন করা যায়। স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস এবং ভূমিতে আগে বিনিয়োগ ছিল, কিন্তু তা অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে– এমন হলে প্রতি বর্গমিটারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর পরিশোধ করে তা রিটার্নে দেখানোর বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আগে রিটার্ন দাখিল না করলে বা রিটার্ন দাখিল করে থাকলেও কোনো আয় রিটার্নে প্রদর্শন না করলে ওই অপ্রদর্শিত আয়ের ওপর নিয়মিত হারে কর দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে তা বৈধ করার সুযোগ আছে। তিনটি ক্ষেত্রেই বৈধ সূত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য নিশ্চিতের বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারণে অপ্রদর্শিত আয়ের নামে কালো টাকার বৈধতার সুযোগ নেওয়া হয়, যা সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তিন নম্বর সুপারিশেও বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দেওয়ার যে কোনো রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়। অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বারবার দেওয়া হলেও সরকারের রাজস্ব আহরণ কখনোই সেভাবে বাড়েনি। যতটুকু হয়েছে, তার জন্য নৈতিকতার বিসর্জন অগ্রহণযোগ্য। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে দৃষ্টান্ত স্থাপনের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব ধারাসহ কালো টাকা সাদা করার সকল প্রকার সুযোগ চিরতরে বাতিল করা হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, এ বিষয়ে টিআইবি অর্থ উপদেষ্টাকে আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছে এবং এর ইতিবাচক প্রতিফলন আশা করছে।