
রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানোর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা। এরপর তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।পুলিশের ভাষ্য, গতকাল সোমবার রাতে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে ওই ব্যক্তিরা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছিলেন। পরে তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, একজন প্রকাশককে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে তাঁর বাসায় কিছু লোক ঢোকার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। পরে ওই ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তার করতে বলেন। কিন্তু ওই প্রকাশকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) উদ্দেশে এক তরুণ বলেন, ‘আপনি কেন এইখানে কথা বলতেছেন এইভাবে। আপনি ওসি, আপনি গ্রেপ্তার করলেন না কেন। আমি বলছি, আমি বলছি...আপনি গ্রেপ্তার করেন।’
তখন ওসি বলেন, ‘ওনার নামে মামলা নেই।’
তরুণ বলেন, ‘মামলা আমি করব, আপনি গ্রেপ্তার করেন।’ ওসি জবাব দেন, আমার সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা) বলছে, মামলা না থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে না।’ ওসি তখন তরুণদের উদ্দেশে ‘সিন ক্রিয়েট’ (অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি) না করার অনুরোধ করেন।
তারপরও তরুণেরা গ্রেপ্তার করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁরা ওসিকে বারবার বলছিলেন, ওসি টাকা খেয়েছেন।
পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের এসি শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা পরিচয়ধারীরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে প্রকাশককে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে চাপ দেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না জানালে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন।
ডিএমপির ধানমন্ডি অঞ্চলের এসি বলেন, আবাসিক এলাকায় বিশৃঙ্খলা হতে পারে—এমন বিবেচনায় তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়। তাঁরা এখনো হেফাজতে আছেন। তাঁদের কীভাবে ‘ডিসপোজাল’ করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। গতকাল তিনজনকে হেফাজতে নেওয়ার পর থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা পরিচয়ে অনেকেই থানা-পুলিশকে ‘আলটিমেটাম’ (দাবি পূরণে সময় বেঁধে দেওয়া) দিচ্ছেন। অনেকেই থানায় আসছেন। এখনো কিছু লোক থানার সামনে অবস্থান করছেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতের ঘটনায় ইচ্ছেমতো আসামি করে মামলা করার অনেক ঘটনা ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আসামি করা হয়েছে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে। আবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, বিদ্বেষ ও স্থানীয় বিরোধও ভূমিকা রেখেছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়, মামলা হলেই গ্রেপ্তার করা যাবে না।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, অতি উৎসাহী ও স্বার্থান্বেষী মহল ঢালাওভাবে মামলা গ্রহণে পুলিশের ওপর চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে রোববার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর তা নিয়ে সমালোচনা হয়। আজ মঙ্গলবার তিনি জামিন পেয়েছেন।
এদিকে জানা গেছে, ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফেসবুকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে তাঁকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।