
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়ার মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়াটি দুষ্কৃতকারীদের আঘাতে মারা গেছে। স্থানীয়দের কাছে প্রিয় এই ঘোড়ার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশ্বস্ত ও নিরীহ প্রাণীটির এমন পরিণতি সমাজের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মনু মিয়ার ঘোড়াটি শুধু মাত্র বাহন ছিল না, ছিল পুরো গ্রামের গর্ব ও ইতিহাসের অংশ।
জানা গেছে, প্রায় ৪৯ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খননের কাজ করছেন ৬৭ বছর বয়সী মনু মিয়া। জেলাসহ আশপাশের এলাকায়ও তিনি শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে পরিচিত। দশ বছর আগে বাজারের দোকান বিক্রি করে একটি ঘোড়া কেনেন মনু মিয়া। যার পিঠে চড়ে ছুটে যেতেন কবর খুঁড়তে, বিদায় জানাতেন মানুষকে। এ পর্যন্ত তিনি তিন হাজারেরও বেশি কবর খনন করেছেন বিনা পারিশ্রমিকে।
বয়সের ভারে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এমন সময়ই তার প্রিয় ঘোড়াটি পাশের মিঠামইনের হাশিমপুরে ঘাস খেতে গেলে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা বল্লমের আঘাতে হত্যা করে। মনু মিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে পরিবার এখনও মনু মিয়ার কাছে এ ঘটনা গোপন রেখেছে।
মনু মিয়ার প্রতিবেশী আলমগীর বলেন, অনেক দিন আগে মনু চাচা বাজারের দোকান বিক্রি করে এই ঘোড়াটি কিনেছিলেন। মানুষ মারা গেলে মনু চাচা এই ঘোড়ায় করে ওই স্থানে ছুটে যেতেন। শুক্রবার কে বা কারা ঘোড়াটিকে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা পুলিশের কাছে দাবি জানাই তদন্ত করে এটার সুষ্ঠু বিচার করা হোক।
এলাকার সন্তান ঢাকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা বলেন, শুনেছি মনু মিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মাঝে তার অনেক দিনের সঙ্গী ঘোড়াটিরও করুণ পরিণতি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মনু মিয়ার এই দুঃখের সময় আমরা তার পাশে থাকার চেষ্টা করবো। মনু মিয়া যাতে সুস্থ হয়ে আবারও তার চিরচেনা কাজে ফিরতে পারে।
জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন জানান, মনু মিয়ার ঘোড়াটিকে যারা হত্যা করেছে, তাদেরকে আইনের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। মিঠামইন থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের বিচার চাই ও ঘোড়ার ক্ষতিপূরণ চাই।
মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির জানান, তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।