Image description

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব জসীমকে দায়িত্ব দেওয়ার আট মাসের মাথায় সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই তাকে বিদায় জানানো হবে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। তবে তাকে অন্য কোথায় পোস্টিং দেয়া হবে নাকি বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে তা নিয়ে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

অন্যদিকে তার উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। নতুন সচিব হিসেবে পেশাদার কূটনীতিকদের অনেকের নাম শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কারও সামারি বা সারসংক্ষেপ যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কী কারণে জসীম উদ্দিনকে সরানো হচ্ছে তা নিয়েও নানান ধরনের গুঞ্জন শোনা গেছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার গঠনের মাসখানেকের মাথায় তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। তার স্থলে নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হয় তৎকালীন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনকে।

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনকে হঠাৎ করে সরিয়ে দেয়ার কারণ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন নি। এ নিয়ে গতকাল শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কেউ মুখ না খুললেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের চাপে রাখাইনে তথাকথিত করিডোর দেয়ার বিরোধীতা করার জন্যই জসীম উদ্দিনকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারআবার কেউ বলেছেন, শুধু রাখাইন করিডোর নয়, এর পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ থাকতে পারে। আবার কেউ মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় জসীম উদ্দিনের বিরদ্ধে একটা পক্ষ ক্রমাগত বিরোধীতা করায় সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। প্রকৃত কারণ কী-তা জানা না গেলেও জসীম উদ্দিনের স্থলে জামায়াতপন্থী সচিব নজরুল ইসলামকে বসানোর পাঁয়তারা চলছে। ইতোমধ্যে জাপানের সাথে এফওসি চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানেও জসীম উদ্দিনকে বাদ দিয়ে নজরুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সচিব জসীম উদ্দিনকে সরানো হলে মূলত বিএনপিরই পরাজয় হবে। কারণ তিনি বিএনপি ঘারানার। তার পারিবারিক ঐতিহ্যও বিএনপিকেন্দ্রীক। তার সহোদর ১৯৯১ সালে নোয়াখালী থেকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার আত্মীয়ও বটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জসীম উদ্দিনকে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে আর না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে হয়ে গেছে। এখন শুধুই বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা বাকি। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে জার্মানির বার্লিনে রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি দেশে ফিরলে আগামী সপ্তাহে হয়তো বর্তমান পররাষ্ট্র সচিবকে বিদায় জানানো হতে পারে।

সরকারের নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা চলছে। এটি শুধুমাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনসহ বিদেশি ইস্যুতে খোঁজ রাখেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের আঁচ পড়েছে মন্ত্রণালয়ের রুটিন কাজেও। গত ১৫ মে জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা, ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকের নির্ধারিত সময় ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি থাকার পরও শেষ মুহূর্তে জাপানকে কূটনৈতিকপত্র দিয়ে এফওসি স্থগিত করার অনুরোধ করে বাংলাদেশ। এফওসিতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পররাষ্ট্র সচিব সোমবার (১২ মে) নোট ভার্বালের মাধ্যমে জাপান কর্তৃপক্ষকে জানায়, এই মুহূর্তে বৈঠকটি স্থগিত করার জন্য। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানতে পেরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়- পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু লুৎফে সিদ্দিকী বৈঠকের নেতৃত্ব দিতে গেলে সেটি আর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক থাকে না। তখন সেটি হবে প্রস্তুতিমূলক সভা।

নানা নাটকীয়তার পর গত ১৩ মে মঙ্গলবার দুপুরের পর নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। অর্থাৎ টোকিওতে নির্ধারিত সময়ে এফওসি বৈঠকে বসতে রাজি হয় বাংলাদেশ। জসীম উদ্দিনের পরিবর্তনে বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম। ইতোমধ্যে সচিব (পূর্ব)-এর নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধি দলের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা। এবারের এফওসি বৈঠকটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কেননা, চলতি মাসের শেষের দিকে প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এফওসিতে প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জসীম উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওই সময় পর্যন্ত জসীম উদ্দিন কোনো দায়িত্বে রাখা হবে কিনা- সেটি নিয়ে নানা আলোচনা আছে।

চীনে রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে জসীম উদ্দিন কাতার এবং গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কনস্যুলার পরিষেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পুরস্কার পায়। এতকিছুর পরেও কেন তাকে সরাতে হচ্ছে -সে প্রশ্ন অনেকেরই।

সূত্র বলছে, আরাকান আর্মি জানিয়েছে তারা মনিবিক করিডোর নামে কোনো করিডোর চায় না। কেউ কেউ মনে করছেন হয়তোবা চীনের চাপে এটা বলেছে আরাকান আর্মি। এহেন মানবিক করিডোরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থাপনার ঘটে চলেছে যত সব তুঘলকি, আজব ও অমানবিক ঘটনা। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মানবিক করিডোর দেবার পূর্ব শর্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দাবি করেছিল। নইলে করিডোরে সমর্থন দিবে না। এই বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিমরাজি থাকলেও পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন কিছু কূটনৈতিক ইস্যু নিয়ে দ্বিমত করেছিলেন।

সূত্র বলছে, সামরিক বাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বশে আনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে সামনে আনা হয়। ড. খলিলকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বানানো হয়। এতেও কেউ কেউ নাখোশ। তারপরেও খলিলুর রহমান প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) এবং কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) এই দুজনকে সঙ্গী করে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। করিডোরের সাথে মূলত পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি সম্পৃক্ত। আর ব্যাক-আপ শক্তি (মূলত প্রধান শক্তি) হিসেবে থাকে সামরিক বাহিনী।

কিন্তু বাধা হিসেবে সামনে এসেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জসীম উদ্দিন। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে করিডোরের বিরুদ্ধাচরণ করায় জসীম উদ্দিনকে চুড়ান্ত অবিশ্বাস ও অনাস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। মো. জসীম উদ্দিনকে বিএনপি ঘরানার বা বিএনপি পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও একজন পেশাদার কুটনীতিক হিসেবে তাঁর সুনাম সর্বজনবিদিত। অনেকেরই ধারণা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও পেশাদারিত্বের বিবেচনায় জসীম উদ্দিনই মাসুদ বিন মোমেনের উত্তরসূরি হতেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তারা মনে করছেন, জসীম উদ্দিনকে সরানো বা চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে বিএনপি লবিও পরাস্ত হয়েছে। কারণ বিএনপির দলীয় অবস্থান মানবিক করিডোরের বিপক্ষে। অনেকের মতে, এ কারণেই গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জসীম উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে।

তাঁদের মতে, তাই যদি হয়, তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা হবে এক বিরল ঘটনা। অতীতে কোন পররাষ্ট্র সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরের নজির নেই। মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূত বানিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। শামস কিবরিয়া, মিজারুল কায়েস প্রমুখ এর গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের অসংখ্য উদাহরণ আছে। কিন্তু পররাষ্ট্র সচিবের বাধ্যতামূলক অবসরের নজির নেই। সূত্র জানায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চেয়েছিলেন জসীম উদ্দিনকে কোথাও রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়নের কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ বাধা দেয়ায় তা নাকি আর হচ্ছে না।

জানা গেছে, ১৩ ব্যাচের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব-পূর্ব হিসেবে দায়িত্বরত জামায়াতপন্থী অফিসার মোঃ নজরুল ইসলামকে সচিবের চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে। যাকে জাপানের সাথে এফওসি চুক্তি স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানেও পাঠানো হয়েছে। যেখানে জসীম উদ্দিনের প্রতিনিধিত্ব করার কথা, সেখানে নজরুল ইসলামকে পাঠানো হয়েছে। ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র। ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। তাঁকেও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়মিত পদোন্নতি দিয়েছে। বিসিএস- ফরেন ক্যাডারে তিনি হয়েছিলেন ৮ম, আর বিএনপি ঘরানার সাবেক সচিব এম ফয়জুল্লায় সিএসপি’র পুত্র এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ হয়েছিলেন পুরা ৮ম ব্যাচে প্রথম। কেউ কেউ বলেছেন, প্রশাসনে যে বিএনপির চেয়ে জামায়াতের অবস্থান অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী তা জসীম উদ্দিনের মাধ্যমেই প্রমাণ হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, ড. খলিলুর রহমান কিংবা উল্লেখিত কয়েকজন মিলেই তো আর জসীম উদ্দিনকে সরানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। এক্ষেত্রে ফ্রান্স-আমেরিকা প্রবাসী ব্লগার ও ইউটিউবারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সাথে আছে মন্ত্রণালয়ের জামায়াতও আওয়ামীপন্থী কতিপয় কর্মকর্তাে সরাসরি জড়িত। এরমধ্যে আছেন ২১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা যিনি পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক অনুবিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত ওই কর্মকর্তা মেঘনাআলমসহ অগণিত মডেল-নায়িকা-গায়িকা-সুন্দরীদের শেল্টার দেন এবং বিদেশি কূটনীতিকদের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে কাড়ি কাড়ি ডলার, ইউরো হাতিয়ে নেন। এজন্য তাঁর রয়েছে একাধিক ডিলার। যাদের মাধ্যমে তিনি এসব কার্যকলাপ করে থাকেন। আরও আছেন ২৫ ব্যাচের দুজন কর্মকর্তা। এই দুজনেই বুয়েটে পড়েছেন। এদের একজন আলোচিত সাবিকুন্নাহার সনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামী হয়েও চাকরি পেয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের আমলেও নিয়মিত পদোন্নতি ও ভালো পোস্টিং পেয়েছেন। তিনি জামাতি ঘারানার একটি পত্রিকার সম্পাদকের একনিষ্ট শিষ্য পরিটয় দিয়ে বর্তমানে সুবিধা লুটতে ব্যস্ত। এই কর্মকর্তা বর্তমানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসে কনসাল জেনারেল।

অপরজন, বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার পলিটিক্যাল হিসেবে কর্মরত। বুয়েটে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ইউকসু নির্বাচনে এজিএস পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। আরেক বুয়েটের সাবেক ছাত্র ২৭তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা এখন নয়াদিল্লিতে মিনিস্টার পলিটিক্যাল হিসেবে দায়িত্বরত। আওয়ামী লীগ আমলে বিরাট আওয়ামী লীগার ছিলেন। এখন বিরাট বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি-হেফাজত, অর্থাৎ যা করলে সুবিধা হবে সেটাই বলছেন, সেটাই করছেন। তাঁর স্ত্রী এবং একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনিও নয়াদিল্লিতে মিনিস্টার পলিটিক্যাল হিসেবে আছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়েছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ঢামেকসু নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু স্বামীর অথবা অন্য কোন প্রভাবে এখন ভোল পাল্টে ফেলেছেন।
সূত্র বলছে, এরা ছাড়াও আরও কিছু অসাধু কর্মকর্তা মিলেমিশে জসীম উদ্দিনের মতো পেশাদার অফিসারকে চূড়ান্ত অপমানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। ইতিপূর্বে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকেও এরা চূড়ান্ত নাজেহাল করে বিদায় করেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মাসুদ বিন মোমেন ছিলেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে। আর জসীম উদ্দিন হলেন নিয়মিত। তবুও জসীম উদ্দিনের রক্ষা হয়তো হচ্ছে না এসব বহুরূপি ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে। অনেকেই বলেছেন, সচিব মহোদয় এদের সুবিধানুযায়ী মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেননি, দলবাজি করেননি এবং তাদেরকে অবৈধ সুবিধা দেননি। এজন্য এরা প্রপাগা-া ছড়িয়েছেন, জসীম হলেন ফ্যাসিস্টের দোসর। বাস্তবে জসীম সাহেবের পরিবার হলো বিএনপি পরিবার। আর এই সুযোগটি নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এখন অসীম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ে তাঁর সাথে রয়েছে এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, এদের কারণেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন কর্মহীন বেকার ও অলস আড্ডার কেন্দ্র মাত্র। শুুধু তাই নয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল মেইল ও নোট ভার্বালও নাকি এখন লামিয়া মোরশেদের নামে আসে। ওখান থেকেই ডেচপাস হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন কর্মহীন এক অস্তিত্ব। তবে এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।