Image description
২০২৫-২৬ অর্থবছর

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এতে টেনে আনা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন প্রকল্প। জানা গেছে, চার শতাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প স্থান পাচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের নতুন এডিপিতে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল—এমন প্রকল্পের পাশাপাশি আরএডিপি থেকে বাদ পড়া প্রকল্পগুলোও নতুন এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। আজকের এনইসি সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও এনইসি চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর আগে গত ৬ মে অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা। ওই সভায় নতুন অর্থবছরের জন্য এডিপিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন এডিপিতে ১ হাজার ১৭১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের মধ্যে ২৫৮টি প্রকল্প বাধ্যতামূলকভাবে শেষ করার কথা বলা হয় সভায়।

সভা সূত্রে জানা যায়, নতুন অর্থবছরের জন্য ৪০৪টি প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রস্তাবিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ প্রকল্পগুলোকে তারকা চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল—এমন ২৫টি প্রকল্পের পাশাপাশি সংশোধিত উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) থেকে বাদ পড়া ৫টি প্রকল্পও আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয় বর্ধিত সভায়।

মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তাড়া থাকে, প্রকল্প অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই কচ্ছপগতি থাকে। মেয়াদ শেষ হয়; কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। বাধ্য হয়ে মেয়াদ ও প্রকল্প ব্যয় বাড়াতে হয় সরকারকে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নতুন এডিপির চারশই যদি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প হয়ে থাকে, সেটা তো এডিপি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বড় দুর্বলতা থাকার ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, ‘এই চারশ প্রকল্পের কোনোটাই যে উত্তীর্ণ করার প্রয়োজন ছিল না তা নয়, বা উত্তীর্ণ করলে উপকার হবে না, তাও নয়। কিন্তু সময়মতো যে আমরা প্রকল্প শেষ করতে পারি না, সেটির ধারাবাহিকতা তো রয়েই গেল।’

গত তিন বছর ধরে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও ধীরগতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এক অর্থবছরে এত কম বাস্তবায়নের নজির আর দেখা যায়নি।

এডিপি কম বাস্তবায়নের কারণ হিসেবে বর্ধিত সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শুধু বিল পরিশোধের কারণে বৃদ্ধি করতে হচ্ছে, সেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বিল পরিশোধ করার বিকল্প পদ্ধতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, অনেক প্রকল্প রয়েছে যা বছরের পর বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলমান রাখা হচ্ছে। এগুলো অতি দ্রুত সমাপ্ত করা প্রয়োজন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি সভায় অবগত করেন, ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটির সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প পরিচালনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা-সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।