
গত তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর মিশরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকঢোল পিটিয়ে মিশরের অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এর পুরো কৃতিত্ব নেন তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম।
এর ঠিক কয়েকদিন পরেই এই সুযোগটা নেয় মিশরে মানব পাচারকারী, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন এজেন্সির দালাল এবং মিশরের পড়ুয়া ছাত্রদের মধ্যেও কিছু দালাল। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশ দূতাবাস যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করেছিল সেটার অর্থ পুরোটাই বিপরীতভাবে বুঝেছে মানবপাচারকারী দালালরা।
মূলত চুক্তিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল শুধুমাত্র যাদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সেনজেন, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের ব্যবহৃত ভিসা থাকবে শুধুমাত্র তারাই কায়রো এয়ারপোর্টে ২৫ ডলারের বিনিময়ে অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা পাবেন।
কিন্তু সেটা না হয়ে স্রোতের মতো দালালদের দু’লাখ থেকে শুরু করে তিন লাখ টাকা দিয়ে আসতে থাকে ছাত্র, সাধারণ শ্রমিক ও ফ্যাসিস্ট সরকারের আওয়ামী দোসর কর্মীরা। ওয়ান অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, মিশরে আসার পরে সাধারণ শ্রমিক এবং ছাত্ররাও জড়িয়ে পড়ছে বেশ কিছু অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে যা ইতোমধ্যেই মিশর প্রবাসী কমিউনিটিতে অনেকটা শোরগোল ফেলেছিল।
যেমন শ্রমিকরা জড়িয়ে পড়ে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা, ইউরোপে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিশরকে প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার, অবৈধ মেডিসিন তথা মালামাল পরিবহন, শুধুমাত্র অবৈধ মালামাল বহন করার কারণে বাংলাদেশী যাত্রীদেরকে কায়রো এয়ারপোর্টে অসম্মানজনক আচরণের শিকার হতে হয় যা অনেকেরই জানা। আর ছাত্রদের অবস্থা আরো করুণ।
আসলে বাংলাদেশ থেকে যেসকল ছাত্ররা মিশরে আসে তাদের মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল শুধুমাত্র পড়াশোনা করার কিন্তু তা না হয়ে তাদের উদ্দেশ্যই থাকে আমি দেড় লাখ টাকা খরচ করে যেহেতু গিয়েছি তার তিন দিন পরে থেকে সে আরো বড় মানব পাচারকারী দালালিতে পরিণত হয়, সে তার বন্ধুদেরকে দু’লাখ টাকা দিয়ে নিয়ে আসে এযেন এক বহমান দালালি চক্র।
পরে এরাই মূলত জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যা প্রবাসী কমিউনিটিতে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। ছাত্রদের এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার কারণে মিশরে তারা সাজাও খেটেছে এবং অনেককেই দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে মিশর সরকার।
মিশরে পড়ুয়া ছাত্রদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের পরিবার এবং মিশর প্রবাসীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক চিন্তিত। ইতোমধ্যে অনেক ছাত্রের ভবিষ্যৎ অঙ্কুরেই ঝরে গেছে যা তাদের দেশে থাকা মা-বাবা এখনো পর্যন্ত জানে না। আজকে হঠাৎ করে কিছু ইজিপ্ট এয়ারের অফিসিয়াল পেজে এক ঘোষণার মাধ্যমে মিশরে অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করেছে, তবে শুধুমাত্র যাদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সেনজেন ও জাপানের ব্যবহৃত ভিসা রয়েছে শুধুমাত্র তাদেরকেই যাচাই বাছাই করে ২৫ ডলারের বিনিময়ে অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করা হবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। তবে আগের মত সাধারণ শ্রমিক এবং ছাত্ররা কোনো সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পাবে না অন অ্যারাইভাল ভিসার ক্ষেত্রে।
কায়রো এয়ারপোর্টের এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ আসার এখন কোনো সুযোগ নেই তবে তোমাদের সরকার যদি কোনো উদ্যোগ নেয় তাহলে সেটা সম্ভব হতে পারে।
উল্লেখ্য, মিশর প্রবাসীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার যেহেতু লাভবান হয় না, প্রবাসীরা যেহেতু লেনদেন বাংলাদেশী কোনো ব্যাংক না থাকায়, সব হুন্ডির মাধ্যমে করে থাকে তাই কোনো সরকারেরই তেমন একটা ভ্রূক্ষেপ থাকে না মিশরের প্রবাসী ও ছাত্রদের প্রতি।