
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নিহত হন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের যুবক জুয়েল রানা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন দিশাহারা। শোকে মুহ্যমান অসহায় বাবা-মা ও স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্দোলনের শেষ দিনে গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের জুয়েল রানা (৩২)। মমতাজুর রহমান ব্যাপারী ও জমেলা বেগমের একমাত্র ছেলে জুয়েল। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান জুয়েল পেশায় ছিলেন পোশাকশ্রমিক। তার উপার্জনেই চলত পরিবারটি। মা-বাবা, স্ত্রী ও অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভুত্থানে যোগ দেন প্রতিবাদী যুবক জুয়েল রানা। আন্দোলনের শেষ দিনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনের খবরে আনন্দ মিছিল বের করেন ছাত্র-জানতা। মিছিলে অংশ নিয়ে গাজীপুরে আনসার একাডেমির সামনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সেখান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান সহকর্মীরা। ওই দিন হাসপাতালে আসা আহত লোকজনের ভিড় থাকায় জুয়েল রানার চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। এ সময়ে তার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা মমতাজুর রহমান ও মা জমেলা বেগম। তাদের কাছে নিহত ছেলের বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা জমেলা বেগম বলেন, ‘অকালে ছেলে হারানোর ব্যথা যে কী কষ্টকর, তা আমরা উপলব্ধি করছি। একমাত্র সন্তান জুয়েল আমাদের মাঝে নেইÑ এটা কোনোভাবেই মনকে বোঝাতে পারছি না।’
বাবা মমতাজুর রহমান বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে সংসার চালানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তার পরেও ছেলে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেÑ এটা ভেবে গর্ববোধ করি।
এ সময় বর্তমান সরকার জুলাই-আগস্টে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহযোগিতার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি। সেই সঙ্গে ছেলে হত্যার জন্য দায়ী ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ তার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ সদস্যদের উপযুক্ত বিচার চান।
এদিকে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া তার স্ত্রী দুলালী আক্তার স্বামীর অবর্তমানে দুই মেয়ে জুঁই আক্তার (৯) ও জিন্না আক্তারকে (৬) নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। দুলালী আক্তার বলেন, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ছোট্ট দুই কন্যাসন্তানকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে আমাদের সাজানো-গোছানো পরিবারটি। সেই সঙ্গে থমকে গেছে স্বামী-পরিবারকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্ন।
জুয়েলকে আর কখনো ফিরে পাবে না তার বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানরা। তবে শহীদ জুয়েল রানার হত্যার উপযুক্ত বিচারসহ পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তাদের।