Image description

Saiyed Abdullah(সাইয়েদ আবদুল্লাহ)


বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ধোঁয়াশাপূর্ণ বেশকিছু কাজকর্ম চলছে। কিন্তু এসব খবরগুলো কোন এক রহস্যজনক কারণে কেন যেন চেপে যাওয়া হচ্ছে। কয়েকটা ঘটনা আগে তুলে ধরে তারপর মতামতে যাবো।
১.
সীমান্ত ইস্যু নিয়ে কৌট করবো বিজিবির ডিজি গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যেসব কথা বলেছেন, সেখান থেকে সিগনিফিক্যান্ট ৩ টা পয়েন্ট:
(ক)
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন— “বাংলাদেশি নাগরিকের নামে সুপরিকল্পিতভাবে ভারত যেই কাজটা করছে সেটা হলো রোহিঙ্গাসহ শত শত মানুষকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে পুশ-ইন করছে, যা ন্যক্কারজনক। যেসব সীমান্তে জনবসতি নেই, এমন জায়গাগুলো টার্গেট করে তারা এসব পুশ-ইন করছে। যেমন- খাগড়াছড়ির পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারির চরাঞ্চল এলাকা দিয়ে তারা এরই মধ্যে পুশ-ইন করেছে। যেখানে টহল যেতে সময় লাগে। এ পর্যন্ত ২০২ জনকে বিজিবির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক।"
(খ)
বিজিবি মহাপরিচালক আরও জানিয়েছেন— সীমান্তের স্থলবেষ্টিত এলাকায় বিজিবির সতর্ক নজরদারির কারণে তারা এবার গ্রাউন্ডে না পেরে সুন্দরবনের দিক দিয়ে রিমোর্ট একটা চর মান্দারবাড়িতে ভারতীয় জাহাজের মাধ্যমে আরও ৭৮ জনকে ফেলে গেছে। সেখান থেকে কোস্টগার্ড সেসব মানুষকে উদ্ধার করে। তাদেরও নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
(গ)
বিজিবির ডিজি আরও বলেন— এর মধ্যে আরেকটা অ্যালার্মিং বিষয় যে কিছু রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে, যারা ভারতের ইউএনএইচসিআরের রিফিউজি। ওখানে মানে ভারতে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা। আইডি কার্ডও আছে। সেটা আমরা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউএনএইচসিআরের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই যে এটা একটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের রিফিউজি সেখানেই তো তাদের রাখা দরকার ছিল। পুরো বিষয়টিকেই বিএসএফ বরাবরের মতো অস্বীকার করছে। তারা বলছে জানে না।
২.
এবার উল্লেখ করবো গত সপ্তাহের (৭মে) একটা খবর—
খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ৬৬ জন ভারতীয় নাগরিকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ৩ পরিবারের ২৭ জন এবং পানছড়ির তিনটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৩৯ জন ভারতীয় নাগরিক অনুপ্রবেশ করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদেরকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বলে অনুপ্রবেশ করা ব্যক্তিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের জানিয়েছেন।
৩.
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরত পাঠানোর একটা হাইফ তৈরী করা হয়েছিলো সাম্প্রতিক সময়ে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো, ফেরত পাঠানো বহু দূরের হিসাব, বরং সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকহারে নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে কক্সবাজারে। এরভেতর আবার রাখাইনে করিডর ইস্যু নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে। এই ইস্যু নিয়ে আমি কয়েক সপ্তাহ আগেই বিস্তারিত লিখেছিলাম। তাই নতুন করে আর পুনরাবৃত্তি করলাম না।
ওপরে উল্লিখিত ১, ২ এবং ৩নং পয়েন্ট পড়ার পর আপনাদের কি মনে হচ্ছে না যে সীমান্ত এলাকা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটছে অত্যন্ত এলার্মিংভাবে?
দেশের সার্বভৌমত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। কিন্তু সেই সার্বভৌমত্বের সাথে কম্প্রোমাইজ করার মত এই খবরগুলো নিশ্চয়ই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলাপ আলোচনার দাবি রাখে সবখানে? কিন্তু সেটা কি হচ্ছে?
কিছুদিন আগে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ড. খলিলুর রহমানকে। তার নাগরিকত্ব ইস্যু এবং অন্যান্য কিছু ব্যাপারে তার এই নিয়োগ নিয়ে যেসব বিতর্ক উঠেছিলো ( খলিলুর রহমানের নিয়োগ বিতর্ক নিয়েও আমি আগে বিস্তারিত একটা লেখা লিখেছিলাম), কিন্তু সেই বিতর্কের ব্যাপারে সরকার খোলাসা করে নাই আজ পর্যন্ত। সরকারের পক্ষ থেকে সেই ব্যাপারে জনগণকে কি অবহিত করা উচিৎ ছিলো না?
মোদ্দাকথা হল— সীমান্ত এলাকা নিয়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, সেসব ঘটনা সম্পর্কে জানাটা দেশের জনগণ ডিজার্ভ করে। কিন্তু সেই ঘটনাপ্রবাহ কেমন যেন চেপে যাওয়া হচ্ছে, আবার কিছু কিছু ঘটনা আংশিকভাবে প্রকাশিত হলেও বিস্তারিত কোন তথ্য সামনে আসছে না। এই ব্যাপারগুলো দুঃখজনক।
সবার আগে দেশের স্বার্থ—এই কথাটা আমরা যেন কখনোই ভুলে না যাই!