Image description

আগামী ছয় মাসের জন্য সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। নতুন হার অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের সর্বনিম্ন সুদহার ৯.৭২ শতাংশ ও সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৯৮ শতাংশ হয়েছে। এতে আরো চাপে পড়বে মধ্যবিত্ত। 

গতকাল থেকে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। উল্টো কমানো হয়েছে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা। কয়েক বছর ধরে উচ্চমূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষ।

এমনকি কভিড-১৯-পরবর্তী সময় থেকেই সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করে ব্যয় সামাল দিচ্ছে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানোর সিদ্ধান্তে সংসারের বাড়তি খরচ সামাল দেওয়ার সুযোগ আরো কমল। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমায় সামগ্রিকভাবে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয় সামলাতে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে। কারণ পারিবারিক খরচের বড় একটি অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে আসে, তারা আরো চাপে পড়বে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্রে এত দিন সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে মুনাফার হার ছিল ১২.৫০ শতাংশ; এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে ১১.৯৩ শতাংশ। এক বছরের জন্য ৯.৮১ শতাংশ মুনাফা মিলবে, যা আগে ১০.২০ শতাংশ ছিল। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এ মুনাফার হার ছিল ১২.৩৭ শতাংশ, সেটা কমিয়ে ১১.৮০ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে ব্যয় বহন করা অনেক পরিবার আরো চাপে পড়বে।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পাঁচ বছর এবং দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নির্ধারিত সুদের হারের (সর্বশেষ ছয় মাসের নিলামের ভিত্তিতে) গড় কার্যকর করা হয়। বর্তমানে এ দুই ক্ষেত্রে সুদহার কমায় আগামী ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রেও মুনাফার হার কমানো হয়েছে। সরকার জাতীয় সঞ্চয়পত্রের প্রধান স্কিমগুলোর মুনাফার হার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। গতকাল পয়লা জুলাই থেকে এই মুনাফার হার কার্যকর করা হয়েছে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মুনাফার সর্বনিম্ন হার হবে ৯.৭২ শতাংশ, যা এত দিন ১০.১৩ শতাংশ ছিল। সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমিয়ে চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য নতুন হার নির্ধারণ করেছে সরকার। মুনাফার সর্বোচ্চ হার ধরা হয়েছে প্রায় ১১.৯৮ শতাংশ, এত দিন ছিল সর্বোচ্চ ১২.৫৫ শতাংশ।

অবশ্য ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব—এই চার ধরনের স্কিমে বিদ্যমান মুনাফার হার বহাল রয়েছে। এ ছাড়া আগামী ছয় মাসে যারা নতুন সঞ্চয়পত্র কিনবে, তাদের ক্ষেত্রে মুনাফার নতুন হার প্রযোজ্য হবে। তবে আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্রয়কালীন সুদহার প্রযোজ্য হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পারিবারিক সঞ্চয়পত্রসহ চারটি প্রধান সঞ্চয়পত্রের নতুন হার ঘোষণা করে। একইভাবে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চপত্র ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মেয়াদি হিসাবেও মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগে ১১.৯৮ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে, এটাই সর্বোচ্চ মুনাফার হার। যা আগে ছিল সর্বোচ্চ ১২.৫৫ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১১.৮০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১২.৩৭ শতাংশ।

পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা বা এর কম বিনিয়োগকারীদের মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১.৮৩ শতাংশ, এত দিন যা ছিল ১২.৪০ শতাংশ। এর বেশি অঙ্কের বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দাঁড়াবে ১১.৮৩ শতাংশ, আগে যা ছিল ১২.৩৭ শতাংশ।

তিন বছরমেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১.৮২ শতাংশ, আগে যা ছিল ১২.৩০ শতাংশ। আর সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফা হবে ১১.৭৭ শতাংশ, এত দিন যা ছিল ১২.২৫ শতাংশ।

এ ছাড়া তিন বছরমেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ মুনাফা পাওয়া যাবে ১১.৮২ শতাংশ, যা এত দিন ছিল ১২.৩০ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে কয়েকটি শর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমানো। সংস্থাটির শর্ত বাস্তবায়নের দিকে হাঁটতে গিয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমাচ্ছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফার হার হ্রাস করার ফলে এ খাত থেকে সরকার ঋণ কম পাবে। এখন সুবিধাভোগীরা সঞ্চয়পত্রে টাকা না রেখে ব্যাংকমুখী হবে।