
সারা দেশে সম্প্রতি গ্রেপ্তারের ঘটনা বেড়েছে। গত ১৯ এপ্রিল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও রেঞ্জের ২০ দিনের অভিযানে ২৮ হাজার ৬৮২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত অন্যান্য অপরাধের আসামিও রয়েছেন।সারা দেশে গ্রেপ্তারসংক্রান্ত পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশের ওই তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিদিন ১৪.৩৪ জন গ্রেপ্তার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার ২১ দিন আগে থেকে পুলিশ সদর দপ্তর প্রতিদিন খুদেবার্তায় এই তথ্য জানিয়ে আসছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মামলা ও পরোয়ানাভুক্ত আসামির পাশাপাশি এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এই গ্রেপ্তার অভিযান আরো জোরালো হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। তিনি বলেন, তাঁদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। দলটির নেতাকর্মীরা এখন কোথাও গোপনে মিছিল-মিটিং করলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।
গতকাল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি আদেশ জারির পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ আইনের ভেতর থেকে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, গত ৫ আগস্ট থেকে গত মার্চ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১০ হাজারের বেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
তবে এককভাবে পুলিশি বিশেষ অভিযান শুরু হয় গত ১৯ এপ্রিল থেকে। ওই দিন এক হাজার ৬০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলায় ও পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার এক হাজার ৮৭, অন্যান্য ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫১৪ জন। ২০ এপ্রিল গ্রেপ্তার এক হাজার ৫৩৪, ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তার এক হাজার ৬৩১, ২২ এপ্রিল এক হাজার ৬১০, ২৪ এপ্রিল এক হাজার ৬১৭, ২৫ এপ্রিল এক হাজার ৬৪২, ২৬ এপ্রিল এক হাজার ৫৩৫, ২৭ এপ্রিল এক হাজার ৫০৮, ২৮ এপ্রিল এক হাজার ৪০৪ এবং ২৯ এপ্রিল এক হাজার ৩৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ধারাবাহিকতায় গত ১ মে গ্রেপ্তার করা হয় এক হাজার ১৩৭, ২ মে গ্রেপ্তার এক হাজার ২৫৫, ৪ মে এক হাজার ৪০৫, ৫ মে এক হাজার ৬২৬, ৬ মে এক হাজার ৬৭৬, ৮ মে এক হাজার ৫৩৮, ৯ মে এক হাজার ৬৭৩, ১০ মে দুই হাজার, ১১ মে এক হাজার এবং ১২ মে এক হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল বলেন, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের আরো সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
তাঁরা হলেন সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীমা আক্তার খানম ওরফে শামীমা শাহরিয়ার; নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন সরকার, রাজধানীর দারুসসালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান মতি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) পরিচালক ও শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব মু. আশরাফ সিদ্দিকী ওরফে বিটু, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নেছার আহমেদ ওরফে নেছার উদ্দিন হাওলাদার, দারুসসালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. রবিউল ইসলাম ও দক্ষিণ বাড্ডা বাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম বিপ্লব।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘আমার অধীনে থাকা এসপি-ওসিদের নির্দেশ দিচ্ছি, নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ড যেন তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় না চলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা দমন-পীড়ন করেছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, মামলার তদন্তেও যারা দোষী, যারা দোসর হিসেবে পরিচিত, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন থানায় অনেক হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, দায়েরকৃত বেশ কিছু মামলায় সমন্বয়হীনতা বা অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ উঠেছে। এসব মামলায় আসামি গ্রেপ্তারের নামে হয়রানির অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ। নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আসক।
সম্প্রতি আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা করার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলায় কাউকে ফাঁসানো বা হয়রানির উদ্দেশ্যে আসামি করা হলে, তা মানবাধিকারের পরিপন্থী।’