Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ চালু করা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সব ভিসিই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচনের। কিন্তু প্রায় ৯ মাস পার হলেও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ছাত্রসংসদ নির্বাচনে খুব একটা অগ্রগতি নেই।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ডাকসু, জাকসু ও রাকসু নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি রয়েছে। সেখানে এই নির্বাচন নিয়ে অনেকেই সরব। তবে বিশেষ আইনে চলা চাকসু ও ইউকসু নির্বাচনে এখনো রূপরেখাই হয়নি। এমনকি ইউকসু নির্বাচনের ব্যাপারটি ভাবছেই না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর সমাবর্তনের কারণে চাকসু নির্বাচন নিয়ে কাজ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে। কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন চাইছে দ্রুত নির্বাচন হোক। আবার কেউ মনে করছে, দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজন নেই। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। তবে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন করতে হলে আইন বা বিধি সংশোধনের প্রয়োজন। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ বলে তারা ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে আগ্রহী নয়। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম, সমাবর্তন আয়োজন, একাডেমিক কার্যক্রম জোরদারসহ নানা ইস্যু দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছে।

জানা যায়, ২০১৯ সালের পর বাংলাদেশে আর কোথাও ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালে, বুয়েটে ২০০১ সালে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছে।

দ্রুতই গঠিত হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন : ডাকসু নির্বাচন কমিশন খুব দ্রুতই গঠিত হতে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহে অথবা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন কমিশন গঠন করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকজন শিক্ষকের নাম চূড়ান্তও করেছে।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন ঘোষণা করে। সেই টাইমলাইন মোতাবেক মে মাসের প্রথম দিকে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টাইমলাইন অনুযায়ী ডাকসুর গঠনতন্ত্র ও ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি চূড়ান্ত করেছে। এখন বাকি আছে শুধু ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন। নির্বাচন কমিশন গঠন হলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসুর পথে যাত্রা শুরু হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, আমরা প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচ থেকে ছয়জনের কমিশন গঠন করব। এর বাইরেও হল প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা একটি কমিশন থাকবে। খুব দ্রুতই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।

জাকসু নির্বাচন ৩১ জুলাই : জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত ৩০ এপ্রিল রাতে এ তফসিল ঘোষণা করেন জাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। তাঁর ঘোষণা অনুযায়ী, ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। একই দিন খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। খসড়া ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি গ্রহণের এবং খসড়া আচরণবিধি সম্পর্কে মতামত গ্রহণের শেষ তারিখ ২১ মে। চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে ৩০ জুন।

জুনে রাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয় : গত ফেব্রুয়ারিতে রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৩০ এপ্রিল ভোটার তালিকা বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ ও ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। এ ছাড়া ১৫ মে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ মে। ২০ মে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। ২২ মে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ এবং ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রোডম্যাপে বলা হয়েছে, প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৭ মে। আর জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসুর নির্বাচন হবে।

কিন্তু ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা ও নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা হয়নি। এরপর ২৮ এপ্রিল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ১৫ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলেও এখনো কোনো সভা হয়নি। এমন অবস্থায় রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা খসড়া ভোটার তালিকা হাতে পেয়েছি। আশা করছি, এ সপ্তাহেই তা প্রকাশ করতে পারব। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন শিগগিরই আচরণবিধি প্রকাশ ও তফসিল ঘোষণা করবে। আমরা যে রোডম্যাপ দিয়েছি তা থেকে নির্বাচন খুব একটা হেরফের হবে না। হয়তো সামান্য কিছুটা পেছানো লাগতে পারে।