
ঘোষিত সময়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আর জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এই অর্থ জোগানে ব্যর্থ হলে সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য আসছে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে। বাজেট প্রণয়ন এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার পাশাপাশি অতিরিক্তি এই অর্থের জোগান দেওয়া অর্থ ভিাগের জন্য বড় চাপ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অর্থ বিভাগ ও ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্র কাঠামোর চলমান সংস্কারের কারণে রাজস্ব আদায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এই ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ করছে অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঘাটতি কমাতে এবার বাজেটের আকার কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। যা ইতোমধ্যে ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের বাজেটের চেয়ে আগামী বাজেটের আকার কিছুটা ছোট হতে পারে বলে জানা গেছে।
অর্থ বিভাগ বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে সরকার আয় বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করছে। স্থানীয় অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়লে ব্যয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যা মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও একই বছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হলে দেশের সর্বস্তরে টাকার প্রবাহ বাড়বে। সরকারি ব্যয়ও বাড়বে। প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে বেশি আয়ও করতে হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থার চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই দুই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে অর্থ বিভাগের প্রতি পৃথক নির্দেশনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান। সংস্কার ও গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বর্তমান সরকার। জাতীয় নির্বাচনের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। এ জন্য ইসির পক্ষ থেকে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দেওয়া নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, জাতীয় নির্বাচনি ব্যয় সরকারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ের খাত। এটা প্রতি পাঁচ বছর পর পর আসে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। এ বছর নির্বাচন উপলক্ষে যেন অতিরিক্ত ব্যয় না হয়, সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে বলা হয়েছে। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় ২ হাজার ২৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এটাকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ বলে মনে করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য আসছে নির্বাচনের খরচের লাগাম কীভাবে টানা যায়, সে কথাও ভাবছে সরকার। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয়েছিল সাড়ে তিন কোটি টাকা।