Image description

ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক অভিযান বিষয়ক প্রধানরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে সোমবার আলোচনায় বসেছেন। আলোচনা হওয়ার কথা ছিল সোমবার দুপুর ১২টায়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে আলোচনা হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান আলোচনা পিছিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় নেয়া হয়। রয়টার্স।

এ দিকে ভারত জানিয়েছে, অস্ত্রবিরতির পর পাকিস্তান সীমান্তে শান্ত অবস্থা বিরাজ করছে আর তাদের শেয়ারবাজারের দর কিছুটা বেড়েছে। অস্ত্রবিরতি শুরুর পর ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে কিছু লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও রাতে কোনো বিস্ফোরণ বা গোলা ছোড়া হয়েছে বলে খবর হয়নি। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যে ওই সীমান্ত বরাবর প্রথম শান্তিপূর্ণ রাত ছিল রোববার। তবে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠলেও ওই অঞ্চলের কিছু স্কুল এখনো বন্ধ আছে।

চার দিন ধরে তীব্র লড়াইয়ের পর কূটনীতি ও ওয়াশিংটনের চাপে দুই দেশ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হিমালয় অঞ্চলের দেশ দু’টির মধ্যে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন। রোববার ভারতের সামরিক বাহিনী এক ‘হটলাইন’ বার্তায় আগের দিনের অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানকে ‘সতর্ক’ করে বলেছে, ফের এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভারত জবাব দেবে; জানিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

তবে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র কোনো লঙ্ঘনের কথা অস্বীকার করেছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর অভিযানবিষয়ক মহাপরিচালকগণ সোমবার দুপুর ১২টায় পরস্পরের সাথে আলোচনায় মিলিত হবেন। তবে এই আলাপের বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তান তাৎক্ষণিভাবে সাড়া দেয়নি।

সোমবার পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জে বেঞ্চমার্ক শেয়ারের সূচক প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ লেনদেন এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখে। তবে ভারতের আক্রমণের পর আগের তিন সেশনে সূচক যতটা পড়ে গিয়েছিল সেই ক্ষতির বেশির ভাগ এদিন পুষিয়ে যায়। শুক্রবার রাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পাকিস্তানের জন্য ১৪০ কোটি ডলারের নতুন ঋণ মঞ্জুর করে।

আগের তিন সেশনে ভারতের শেয়ার বাজার দেড় শতাংশ ক্ষতির শিকার হওয়ার পর এ দিন প্রাথমিক লেনদেনের সময় বেঞ্চমার্ক শেয়ারগুলোর সূচক আড়াই শতাংশ বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানের সাথে সঙ্ঘাত নিয়ে উদ্বেগে শুক্রবারের আগের দুই দিন ইক্যুইটি থেকে আট হাজার ৩০০ কোটি ডলার মুছে যায়।

অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন : এ দিকে পাকিস্তানকে একটি ‘হটলাইন’ বার্তা পাঠিয়ে অস্ত্রবিরতি সমঝোতার লঙ্ঘন নিয়ে সতর্ক করে ভারতের সামরিক বাহিনী বলেছে, যদি এর পুনরাবৃত্তি হয় তবে নয়া দিল্লি জবাব দেবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার বার্তাটি পাঠানো হয়। তবে অস্ত্রবিরতির কোনো লঙ্ঘনের কথা প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র।

নড়বড়ে একটি অস্ত্রবিরতির ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স (ডিজিএমও) এই সমঝোতা নিয়ে কথা বলেছেন, জানিয়েছে রয়টার্স। উভয় পক্ষ শনিবার রাতে অস্ত্রবিরতির প্রাথমিক লঙ্ঘনের জন্য এক অপরকে দায়ী করে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর অস্ত্রবিরতি ঠিকঠাকভাবে চলছে বলেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা সশস্ত্রবাহিনী অস্ত্রবিরতির কোনো লঙ্ঘন করেনি।” রোববার ইসলামাবাদের এই সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ টানা চার দিন ধরে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত থাকার পর শনিবার বিকেলে হঠাৎ করেই অস্ত্রবিরতির ঘোষণা আসে। তিন দশকের মধ্যে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে তীব্র লড়াই। তারা পরস্পরের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ও ড্রোনযোগে হামলা চালায়। এসব পাল্টাপাল্টি হামলায় প্রায় ৭০ জন নিহত হন।

লড়াই উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, এমনটি বোধ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আর যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপরতা অস্ত্রবিরতি সমঝোতায় সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার দুই দেশের মধ্যে এই অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়ে জানান, ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় এটি সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত শাসিত কাশ্মিরে গোলাবর্ষিত হতে দেখা যায়। চার দিনের যুদ্ধের অধিকাংশ সময় এই অঞ্চলটিই কেন্দ্রে ছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বাসিন্দারা ও রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্ল্যাকআউটের মধ্যে সীমান্তের কাছের শহরগুলোতে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা যায়।

অস্ত্রবিরতির কথা উল্লেখ করে ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজিব ঘাই বলেন, “অনেক সময় এই ধরনের সমঝোতাগুলো ফলপ্রসূ হতে, ঘটনাস্থলে স্পষ্ট হতে সময় নেয়। (ভারতীয়) সশস্ত্রবাহিনী (গতকাল) অতি অতি উচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল আর এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে।” তিনি জানান, ভারতের সেনা প্রধান বাহিনীর কমান্ডারদের তারা যেটা ভালো মনে করবেন সেভাবে সীমান্তের অপর পাশ থেকে আসা ‘যেকোনো ধরনের লঙ্ঘনের’ মোকাবেলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, তার সমমর্যাদার পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা শনিবার বিকালে তাকে ফোন করে দুই দেশের ‘শত্রুতা বন্ধের’ প্রস্তাব দেন এবং জরুরিভিত্তিতে অস্ত্রবিরতির অনুরোধ জানান।

অপর দিকে পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র জানান, ৬ ও ৭ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক হামলা চালানোর ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপের পর ভারতের আগের জানানো অনুরোধে ১০ মে সাড়া দেয় পাকিস্তান। শনিবার রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ত্রবিরতি সমঝোতার প্রতি তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে এটি লঙ্ঘনের জন্য ভারতকে দায়ী করেছিল।