Image description

Faham Abdus Salam(ফাহাম আবদুস সালাম)


 
 
"একটি রিপাবলিক তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের কোনো জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ‘একজন শেখ হাসিনা’ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধানে কোনো ধরনের বাধা ছিল না।
 
১৯৯১ সালের দ্বাদশ সংশোধনীর প্রসঙ্গ টেনে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ যখন সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রবেশ করল, তখন রাষ্ট্রপতির হাতে যে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, সেই ক্ষমতার প্রতিটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তির আধিপত্য—সবকিছু মিলেই এই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছে।"
 
- আলী রিয়াজ (প্রথম আলো থেকে)
 
আমার মনে হয় আলী রিয়াজ সাহেবের ফান্ডামেন্টাল মিস্যান্ডারস্ট্যান্ডিং আছে বাংলাদেশে "ক্ষমতা" কীভাবে কাজ করে - এ নিয়ে। আপনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সংবিধান সংশোধন করতে পারেন এবং সেই সংবিধানেই ফ্যাশিজম আসতে পারে। প্রতিটি সংস্কার ও সংশোধনকে বাইপাস করা সম্ভব। সম্পূর্ণ নতুন করে সংবিধান লেখা হলে সেখানেও সম্ভব হবে। বাংলাদেশে হাসিনা গিয়ে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কেড়ে নেয় নাই। প্রধান বিচারপতি নিজে গিয়ে হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করে নৈবেদ্য দিয়ে এসেছে। ফ্যাশিজম কোনোদিনও সংবিধান মেনে আসে না এবং ফ্যাশিজমের বিরুদ্ধে সংবিধান খুবই লো লেভেলের ডেটারেন্ট।
 
আমাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও খাইসলত খুবই খারাপ এবং আমরা নিজেরাই গোলামী করা শুরু করি প্রধানমন্ত্রীর। এই খাইসলত না বদলিয়ে, আইন বদলালে কিছুই হবে না। হাসিনা ফ্যাশিস্ট হয়ে উঠছিলো সংবিধানের জন্য না - নীচের ৩টি কারণে:
 
১. তাকে নির্বাচন করতে হতো না সরকারে টিকে থাকার জন্য
২. এই নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় থাকাকে নিশ্চিত করেছিলো ইন্ডিয়া; এবং
৩. বাংলাদেশের সুশীল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ হাসিনার ক্ষমতার বৈধতা উৎপাদন করেছিলো
 
শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলে হাসিনা ২০১৩ তেই বাদ পড়তো। বাংলাদেশের জনগণ পরপর দুইবার এক রেস্তোরাঁতেই খেতে যায় না, এক পার্টিকে সরকারে রাখা তো দূর কি বাত।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর যেসব মেজার নেয়া হয়েছে সংস্কার কমিটিতে - প্রত্যেকটা ওভারকাম করা সম্ভব। আইন মেনেই সম্ভব। ধরেন যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ১০টা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী রাখলেন। আপনি তো এটা বন্ধ করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রেসিডেন্টকে দিলে চুপ্পুর চেয়ে বড় চামচাকে আপনি প্রেসিডেন্ট বানাবেন। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নাই - চুপ্পু সম্বন্ধে হাসিনার DGFI যেই রিপোর্ট বানিয়েছিলো - সেটা পড়লেই আপনার পিলে চমকে যাবে। তো হাসিনা কেন সব জেনেশুনে চুপ্পুকে প্রেসিডেন্ট বানালো? কারণ হাসিনার দরকার ছিলো একটা পুডলের। প্রেসিডেন্ট বা বিচারপতি যাকেই আপনি ক্ষমতা দেন বা পাওয়ার শেয়ার করেন - সেইটা ওভারকাম করা সম্ভব। সহজেই সম্ভব। পাওয়ার শেয়ার করার চেয়ে অনেক অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোলো আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো এবং ইনস্টিটিউশনগুলো যেন স্বাধীনভাবে ফাংশন করতে পারে।
 
যেই জায়গায় আমাদের আসলেই সংস্কার দরকার - সেটা হোলো নির্বাচন ব্যবস্থায় যেন প্রধানমন্ত্রী হাত দিতে না পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এগজিকিউটিভ ক্ষমতা কমানো হোলো - রেসিপি ফর ডিজাস্টার। যেই কাজটা প্রধানমন্ত্রীর সেটা তাকেই করতে দিতে হবে। আইডিয়া হোলো সে যদি ফেইল করে - তাকে সমালোচনা করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে - এবং তাকে ভোটের মাধ্যমে বিতাড়িত করার ক্ষমতা আপনার থাকতে হবে। নাগরিক হিসাবে আমাদের রক্ষাকবচ হোলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্ভয়ে ভোট দিতে পারার ক্ষমতা। এই দুই জায়গায় যেন সরকার বাম হাত ঢুকাতে না পারে - সেই সংস্কার আমাদের দরকার।
 
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস করা কোনো সমাধান না। তাকে সর্বোচ্চ এগজিকিউটিভ পাওয়ার ও সর্বোচ্চ দায়ভার - দুটোই দিতে হবে। যে কারণে পার্টি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী - আলাদা মানুষকে করার প্রস্তাব হোলো একটা স্টুপিড আইডিয়া। আপনার কি মনে হয় বিএনপি পার্টি প্রধান তারেক রহমান ছাড়া অন্য কাওকে বানানো হলে - বিএনপির কর্মীরা তার থেকে অর্ডার নেবে? না তারেক রহমানের কথাই শেষ কথা হবে? এই ধরনের সুশীল ওয়েস্টার্ন য়ুনিভার্সিটি চিন্তা পৃথিবীতে কোথাওই কাজ করে না। বাংলাদেশেও করবে না।
অথরিটি যার - রেস্পন্সিবিলিটিও তার। হাসিনা আমাদের জন্য একটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সেই দুঃস্বপ্নকে মাথায় রেখে আমরা যদি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে পানিতে নামিয়ে দেই - সরকার তো ফেইলই করবে।
 
প্রধানমন্ত্রীকে এবং সরকারকে বরং আরো বেশী ক্ষমতা দেয়া উচিত যেন তারা পাবলিক সার্ভিসকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ পায়। বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিস, মিলিট্ৰি ও পুলিসের হাজার হাজার আওয়ামীকে চাকরি থেকে বের করতে হবে। বর্তমান ইউনুস সরকার এই জায়গায় খারাপ করেছে। খুবই খারাপ। পরবর্তী পলিটিকাল গভমেন্ট যেন এই কাজটা করতে পারে - সেই সুযোগ অন্তত সৃষ্টি করুন। আওয়ামী অথর্বদের জায়গায় যেন পরবর্তী সরকার, প্রাইভেট সেক্টর থেকে মেরিটোক্রেসির ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দিতে পারে - সেই ফ্রেইমওয়ার্ক তৈরী করুন।
 
আপনার প্রথম স্টেপ তো অবিশ্বাসের হতে পারে না। একটা সরকারকে তো কাজ করতে দেয়ার সুযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো কোনো সমাধান না। যেই ইনস্টিটিউশনের যেই কাজ করা দরকার - সেই কাজ করতে দিতে হবে এবং উক্ত ইনস্টিটিউশানের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। সমাধানটা ঐ জায়গায়।