Image description
রাজধানীর হোটেলে তিন মরদেহ

সৌদি আরবপ্রবাসী মনির হোসেন দেশে আসার পর জমি এবং বাড়ি ভাড়ার টাকার হিসাব নিয়ে তাঁর কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামের বিরোধ দেখা দেয়। রাজধানীর মগবাজারে আবাসিক হোটেল থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ মনিরের লাশ উদ্ধারের পরদিন সোমবার রাতে দায়ের হওয়া মামলায় এই অভিযোগ করা হয়েছে। তবে প্রবাসীর সঙ্গে জমি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না বলে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে দাবি করেন রফিকুল। তাঁকে দু’দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

তিনজনের মরদেহ উদ্ধারের মামলায় বাদী হয়েছেন মনিরের বড় ভাই ইতালি প্রবাসী নুরুল আমিন মানিক। এজাহারে বলা হয়, রফিকুল মনিরের চাচাতো চাচা। দু’জনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলায়। তবে রফিকুল থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে। সেখানে মনিরের দুটি বাড়ি দেখভাল করেন তিনি। তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। সে সুবাদে মনির প্রবাসে থেকে রফিকুলের মাধ্যমে গ্রামে এবং কেরানীগঞ্জে জমি ও বাড়ি কেনেন। সবই দেখাশোনা করেন রফিকুল। 

এজাহারে আরও বলা হয়, ঈদুল আজহার আগে মনির দেশে আসেন। তাঁর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হোটেলে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে মনির, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও প্রতিবন্ধী বড় ছেলে নাঈম হোসেনকে হত্যা করেছে।

তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় কেয়ারটেকার রফিকুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতে নেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জালাল উদ্দিন আদালতে তাঁর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তখন ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আলম বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। পত্রপত্রিকায় ঘটনাটি এসেছে। একটি পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় রফিকুলও দুঃখিত। মনির দেশে এলে তাঁর মাধ্যমেই হোটেলে উঠতেন। খাবার উনিও খেয়েছেন। তখন বিচারক বলেন, একজন অসুস্থ হতে পারে, পুরো পরিবার মারা গেল! রফিকুলের বক্তব্য শুনতে চান বিচারক। 
তখন রফিকুল বলেন, পুলিশ যা বলছে, এর অতিরিক্ত আমি জানি না। ভর্তা-ভাত হোটেল থেকে এক বক্স ভাত, মুরগির রেজালা, আলু ভর্তা আর শুঁটকি ভর্তা কিনেছিলাম। মনিরের স্ত্রী শুঁটকি পছন্দ করতেন। এ জন্য শুঁটকি নিতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমি আর মনির ওই হোটেলে নান, শিককাবাব আর ফালুদা খাই। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 
গত শনিবার মনির ছেলের চিকিৎসার জন্য স্ত্রীসহ গ্রামের বাড়ি থেকে এসে রাজধানীর মগবাজার মোড়ে সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে ওঠেন। পরদিন সকালে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।  

রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক সমকালকে বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় মনিরের বড় ভাই নুরুল আমিন ইতালি থেকে দেশে আসেন। রাতে তিনি হত্যা মামলা করেন।