Image description
দুরবস্থা চলছেই রেলে

রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনের আওতায় তিস্তা রেলসেতুসহ ১২৫ সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতুর অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে ৬০ জোড়া ট্রেন। এর মধ্যে রয়েছে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসসহ ১৮ জোড়া আন্তনগর ট্রেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরাতন তিস্তা রেলসেতুর পাশে নতুন আরেকটি রেলসতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত আটকে রয়েছে সমীক্ষাতে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে বন্যায় পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের ১২৫টির বেশি স্থানে রেললাইনের ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট জেলায়। বন্যায় রেললাইনের পাথর পানির তোড়ে ভেসে যায়। সেই সময় থেকে বেশ কয়েকটি রেলসেতুও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এসব সেতু মাঝে মধ্যে মেরামত করে সচল রাখা হয়েছে। সূত্র মতে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। তবে ওই গতিতে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে পারে না। তাহলে ট্রেন অস্বাভাবিকভাবে দুলতে থাকে ও যাত্রীদের ভয় ধরানো ঝাঁকুনি খেতে হয়। এ ছাড়া মালবাহী ট্রেন সেতুর ওপর উঠলে সেতু ও ট্রেন দুটিাই অত্যধিক কাঁপে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, লালমনিরহাট রেল বিভাগের সেতুগুলো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। তিস্তা নদীর ওপর রেলসেতুটি নির্মিত হয় ১৮৯৯-১৯০০ সালে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য একটি সেতু থেকে স্প্যান, গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে ১৯৭২ সালে তা মেরামত করা হয়। লালমনিরহাট রেল বিভাগের শতাধিক রেলসেতু বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবে পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত রেলসেতুগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, লালমিনিরহাট ডিভিশনে প্রতিদিন ৬০ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসসহ ১৮ জোড়া আন্তনগর ট্রেন রয়েছে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।

জানা গেছে, লালমনিরহাট ও পাকশী দুটি রেল ডিভিশন নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে। এর মধ্যে লালমনিরহাট রেল বিভাগে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর নীলফামারী ও বগুড়া জেলার ওপর দিয়ে রেলপথ রয়েছে ৫০০ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই রেলপথে সেতু রয়েছে প্রায় ৪১০টি। এর অধিকাংশই অবস্থা খুব নাজুক। এসব সেতুর মধ্যে শতাধিক সেতুর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। এর মধ্যে তিস্তা রেলসেতুসহ ২৫টি সেতু অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। রেলের লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলী এবং সেতু প্রকৌশলী (অ. দা.) নাজিব কায়সার বলেন, লালমনিরহাট ডিভিশনে শতাধিক সেতু ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ২৬টি।

সূত্র মতে, বিগত সরকারের আমলে মেয়াদোত্তীর্ণ তিস্তা রেলসেতুর পাশেই আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল রেল বিভাগ। তারপর একটি উচ্চপর্যায়ের টিম স্থান ও সেতু পরিদর্শন শেষে সমীক্ষাও করে গেছেন। কিন্তু সেই সমীক্ষা আলোর মুখ দেখেনি।