Image description
শ্রীপুর ও কলাবাগান থানার ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর বদলে যাবে পুলিশের ভাবমূর্তিএমন আশা ছিল জনসাধারণের। দায়িত্বশীল, জনবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ বাহিনী গঠনের প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে রাজধানীর কলাবাগানদেশের বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন করে সামনে এসেছে। কোথাও অডিও ফাঁস, কোথাও সরাসরি অভিযোগ; তদন্ত চললেও অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে পদে থেকে যাচ্ছেন, যা জন-আস্থা নষ্ট করছে দিন দিন।

গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ : শ্রীপুর থানার ওসি মো. জয়নাল আবেদীন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘুষ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সেলিম সিকদার নামের এক ঝুট ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওসির ঘুষ চাওয়ার কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, তিনি স্থানীয় একজনের মধ্যস্থতায় সেলিমকে কারখানা থেকে ঝুট বের করতে সহযোগিতা করছেন এবং এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে বিনা বাধায় ঝুট বের করে নিতে পারবেন। সেলিম সিকদার দাবি করেন, গ্রেপ্তারের দিন তাঁর কাছ থেকে ওসি আড়াই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন।

গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে এবং রেকর্ডিংটি ফরেনসিক যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। ফরেনসিকের প্রতিবেদন এলে বিস্তারিত জানানো হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান ও দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ : সম্প্রতি কলাবাগান থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান ও দুই উপপরিদর্শক (এসআই) আবু হুরায়রা জিহান ও বেলাল উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কলাবাগান এলাকার আওয়ামী লীগ কর্মী ড. আবদুল ওয়াদুদ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য যদি অপরাধ বা অন্যায় করে থাকেন, এটি আমরা খুবই গুরুত্বসহ দেখি। সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনুসন্ধান করানো হয়। যদি দেখা যায়, কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কাউকে আমরা ছাড় দিই না।

টাঙ্গাইলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. উমর ফারুক বলেন, যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় অন্য সদস্যদেরও অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা সাম্প্রতিক কিছু অভিযোগ : কক্সবাজারের টেকনাফ থানার এসআই বদিউল আলমকে ৬ ফেব্রুয়ারি হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার এসআই মাহফুজুর রহমানকে ১২ নভেম্বর ঘুষের টাকা লেনদেনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই মো. নজরুল ইসলামকে হত্যা মামলার জেরে চারজনকে আটক করে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ২৪ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; নাটোর সদর থানার এসআই আমিনুল ইসলামকে ১৮ জানুয়ারি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার জন্য সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়; সিলেটের বিশ্বনাথে মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করতে কয়েক দফায় লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে আলীম উদ্দিন নামের এক এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সিলেট পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়; কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, যশোরের এসপি মো. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, নীলফামারীর এসপি মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ও সুনামগঞ্জের এসপি আ ফ ম আনোয়ার হোসেন খানকে ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার করা হয়। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ ছিল।