
অধ্যাপক গোলাম আযম চাচার মামলার সময় থেকে ব্যারিস্টার রাজ্জাক চাচার নামের সাথে আমার পরিচয়। পরে চাচার সাথে আমার সম্পর্ক আব্বু ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে গভীর হওয়া শুরু হয়। চাচার মৃত্যুর পর বিভিন্নজন স্মৃতিচারণ করে অনেক কথা লিখেছেন। আমি স্বভাবগত ভাবে তেমন একটা লিখতে পারি না। অনেক বার চিন্তা করেছি, কিন্তু কি লিখব ভেবে পাই না। চাচার সাথে আমি নানা বিষয় শেয়ার করতাম। চাচা আমাকে বাবা বলে ডাকতেন। আমি আব্বুর গলার টান রাজ্জাক চাচার গলায় শুনতে পেতাম। সেই গলা আর শুনতে পাবো না, ভাবলেই মনটা ভারী হয়ে উঠে। চাচা আব্বুর কেস নিয়ে একটি বই লিখছিলেন বলে আমাকে বলেছিলেন। জানি না লেখাটার কি অবস্থা!
চাচার সাথে একটা স্মৃতি লেখার জন্য আজকে এই পোস্ট দেয়া। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্বুর ফাঁসির রায় দেয়া হয়। চাচা আমাকে এর কয়েক মাস আগেই একদিন রাত ১০ টার দিকে আমাকে তাঁর চেম্বারে ডাকলেন। ডেকে আমাকে একটা রায়ের খসড়া কপি দেখালেন। বললেন কাউকে কিছু বলা যাবে না। আমি কপি পড়ে দেখলাম আব্বুর ফাঁসির রায় লেখা রয়েছে। চাচা আমাকে বললেন, ওরা তো মোল্লা ভাইকে ফাঁসি দেয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তোমার আব্বাকে জানানো দরকার। আমি বললাম, এটা কি নিশ্চিত খবর চাচা? উনি বললেন হ্যাঁ। আমি বললাম, দুই দিন পরেই আব্বুর সাথে সাক্ষাৎ। আমি আব্বুকে জানাব। রাজ্জাক চাচা বললেন, মোল্লা ভাই কী বলেন আমাকে জানাবা। আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
দুই দিন পরে আব্বুর সাথে দেখা হওয়ার শেষে ফাঁসির খবর দিলাম। আব্বু একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তাই নাকি? ওরা আমার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে দিয়ে ফাঁসি দিয়ে দিবে? রাজ্জাক ভাই তোমাকে নিশ্চিত ভাবে বলেছেন? আমি হ্যাঁ বললাম। আব্বু বেশ চিন্তিত ভাবে জেলের ভিতরে চলে গেলেন। আমি আব্বুর সাথে যে কথা হল, তা রাজ্জাক চাচাকে জানালাম। রাজ্জাক চাচা আমাকে আবার ফাঁসির ব্যাপারটা কনফার্ম করলেন। এর বেশ কিছু দিন পরে আব্বুর সাথে আবার সাক্ষাৎ হল। আব্বু আবার আমাকে ফাঁসির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন ও আমি কনফার্ম করলাম। আব্বু বললেন, আমি কেয়ার করি না। এটা তো আমার সৌভাগ্য যে, আমাকে আল্লাহ শাহাদাতের রাস্তায় কবুল করছেন। তুমি মন খারাপ করো না। এরপরের ঘটনা তো সবার জানাই আছে।
রাজ্জাক চাচা আমার চরম দুঃসময়ে সব সময় আমাকে সাহস দিয়েছেন, সাহায্য করেছেন। আমার মনে আছে, আমি বলার পরে উনি ও মাঈনউদ্দিন চাচা আমাদের একটা ব্যাপারে সাহায্য করতে লন্ডন থেকে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। উনি কয়েকবারই তুরস্ক গিয়েছিলেন, আমার সাথে বেশ কিছু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আমার সাথে আব্বুর কেস ও জীবন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। উনার কথা ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ছিল মনোমুগ্ধকর। উনি নানা বিষয়ে যেভাবে আন্তরিকভাবে আলোচনা করতেন, সে রকম কাউকে আর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। উনি আমার কাছ থেকে অন্যান্য শহীদ পরিবারের ব্যাপারেও খবর নিতেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের রাজ্জাক চাচার যাবতীয় গুনাহগুলো মাফ করে উনার সমস্ত ভাল আমল ও কাজগুলো কবুল করুন, তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগান করে দিন, শেষ বিচারের দিন হিসাব সহজ করে জান্নাত নসীব করুন, আমীন। আহা! আমার রাজ্জাক চাচা। কি সুন্দর, আন্তরিক ছিল তাঁর বাবা ডাক! এখনও কানে বাজে!
হাসান জামিল, আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে