
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমছে। সরকারের চেষ্টা ও নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা অসম্ভব কিছু হবে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত ব্যাংকার এসএমএস নারীর উদ্যোক্তার সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, সিটি ব্যাংকের এমডি ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা।
অনুষ্ঠানে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপাই,আর আরেকদিকে বলি মূল্যস্ফীতি কমে না, তাহলে তো হবে না। আমাদের এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। সেই জায়গা থেকে আমরা কাজ করছি। মূল্যস্ফীতি কমতে একটু সময় লাগছে। তবে আস্তে আস্তে সেটি কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি, সেটি এখন ৯ শতাংশের একটু বেশিতে রয়েছে। আমি আশাবাদী, এটা আস্তে আস্তে আরো কমবে। আমরা যদি চেষ্টা করি, নীতির স্থিতিশীলতা থাকে তাহলে ৪-৫ শতাংশে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনা অসম্ভব কিছু না। এবং সেটিই হবে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান।
গভর্নর বলেন, নারীদের সাংবিধানিক যে অধিকার রয়েছে, বাস্তবে তারা সেই অধিকার পাচ্ছে না। নারীদের ঋণের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। নারীদেরকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের মা-বোনদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া হয়েছে, তবে বর্তমান বাস্তবতায় তা উচিত নয়। নারীদের রান্নাঘর থেকে বের করে আনতে হবে—আমাদের সেই মানসিকতার বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, আমাদের মা-বোন-মেয়ে রয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীরা পাচ্ছেন, যা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। তাদের জন্য কীভাবে ঋণ বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে, তাদের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেবো, তবে তা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফান্ড বাড়িয়ে নয়। কারণ, সেখান থেকে দিলে নতুন টাকা তৈরি করতে হয়। নারীদের ঋণ দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে, তাদের অধিকার বিবেচনায় রেখেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে সিএমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অধিকতর অংশগ্রহণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়। ৪ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ১১ মে পর্যন্ত। মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা পণ্য নিয়ে আসেন। এবারের মেলায় শেষ দিনে ৬ জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেয়া হবে।