Image description

১ হাজার ৮৪ কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৪১০ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় নরসিংদী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানসহ (পোটন) ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পোটনের মালিকানাধীন ‘মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে আমদানিকৃত ১ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন এমওপি, টিএসপি এবং ডিএপি সার সরবরাহ না করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

মঙ্গলবার (৬ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

অন্য আসামিরা হলেন- মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের মহাব্যবস্থাপক মো. শাহাদত হোসেন (নিপু), মো. নাজমুল আলম (বাদল), উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধি মো. সোহরাব হোসেন এবং প্রতিনিধি (খুলনা ও নওয়াপাড়া) মো. আতাউর রহমান।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক বিদেশ হতে আমদানিকৃত এমওপি, টিএসপি এবং ডিএপি সার সরবরাহের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিসিভার্স ও স্থানীয় পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে ৮টি জাহাজের সার সরবরাহের জন্য কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে চুক্তিকৃত বাফার গুদামে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহ না করে ১ কোটি ৮৪ হাজার ৭১ মেট্রিক টন সার একে অন্যের সহযোগিতায় অন্যত্র বিক্রয় করে। যার মূল্য এক হাজার চুরাশি কোটি এক লক্ষ নয় হাজার চারশত দশ টাকা। কিন্তু আত্মসাৎকৃত সার ট্রানজিটে রয়েছে বলে বিএডিসিকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে মেসার্স পোটন ট্রেডার্স।

 

দুদকের অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে জি টু জি চুক্তির আওতায় বেলারুশ, কানাডা, রাশিয়া এবং মরক্কো থেকে ৮টি লটে এমওপি, টিএসপি এবং ডিএপি সার আমদানির জন্য বিএডিসি’র সাথে পোটন ট্রেডার্সের পৃথক ৮টি চুক্তি সম্পাদিত হয়। উক্ত লটগুলোর সমুদয় সার চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে সিএন্ডএফসহ উভয় বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল হতে সার্ভে, স্টাভিডরিং, লাইটারিং, বস্তা সরবরাহ, ওজন, ব্যাগিং, হ্যান্ডলিং এবং আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে কর্মসূচি অনুসারে বিএডিসি’র বিভিন্ন গুদামে সরবরাহের জন্য রিসিভার্স ও পরিবহণ এজেন্ট নিয়োগের লক্ষ্যে বিএডিসি কর্তৃক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে মেসার্স পোটন ট্রেডার্স অংশগ্রহণ করে। দরপত্র মূল্যায়নকালে মেসার্স পোটন ট্রেডাসের দরপত্র রেসপনসিভ ও সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় বিএডিসি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেন।

চুক্তি মোতাবেক সার নির্ধারিত তারিখে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। রিসিভার্স ও পরিবহণ এজেন্ট মেসার্স পোটন ট্রেডার্স কর্তৃক উভয় বন্দর হতে সমুদয় সার নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিএডিসির গুদামে সরবরাহ কাজ সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু মেসার্স পোটন ট্রেডার্স কর্তৃক অধিকাংশ সার বিএডিসির গুদামে সরবরাহ করলেও ১ কোটি ৮৪ লাখ মে. টন সার সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করেছেন। আত্মসাৎকৃত সারের আনুষঙ্গিক খরচসহ আমদানি মূল্য ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানকালে আরও দেখা যায় যে, মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামরুল আশরাফ খান (পোটন) এবং তার কর্মচারী কর্তৃক সার আত্মসাৎ করার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বিএডিসি ২০২২ সালের নভেম্বরে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে বিএডিসি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে। উক্ত তদন্ত কমিটি পরের বছর মার্চের ২৬ তারিখ সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘মেসার্স পোটন ট্রেডার্স হতে ৬টি জাহাজের বিপরীতে এমওপি ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৯ দশমিক ৮০০ মে. টন, একটি জাহাজের বিপরীতে টিএসপি ২০ হাজার ৯৮০ দশমিক ৪০০ মে. টন এবং একটি জাহাজের বিপরীতে ডিএপি ২৮ হাজার ৪০১ দশমিক ৬০০ মে. টন সার বিএডিসি পাওনা রয়েছে, যার আমদানি মূল্য প্রায় ১ হাজার ৮৪ কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৪১০ টাকা। ওই সার কামরুল আশরাফ খান (পোটন) সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করেছেন। মামলার আসামিরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর প্রায় ৫৮২ কোটি টাকার সরকারি সার সরবরাহ না করে আত্মসাতের অভিযোগে কামরুল আশরাফ খান পোটনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। যার তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।