Image description

মাদারীপুরে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে শতবর্ষী একটি বটগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ইতোমধ্যে গাছটির ডালপালা থেকে শুরু করে বেশিরভাগ অংশ কাটা শেষ। 

গতকাল সোমবার (৫ মে) সকাল থেকে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে গাছটি কাটা শুরু করেন স্থানীয় মুসল্লী ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা। একে একে ডালপালা থেকে শুরু করে দণ্ডায়মান কাণ্ডগুলো কেটে ফেলা হয়।

তারা বলছেন, বটগাছে গোড়ায় নারীরা শিন্নি ও মিষ্টি দেয়। আবার অনেকে লাল কাপড় পেঁচিয়ে দেয়। অনেকে আবার বটগাছকে দেবতা মনে করে পূজা করেন; এসব শিরক। যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলমমীরের কান্দি এলাকার কুমার নদের পাড়ে সত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন জমিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে শতবর্ষী বটগাছটি। এই বাটগাছ ঘিরে গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও এক ধরণের কৌতুহল রয়েছে। স্থানীয় অনেকেই বটগাছের নিচে ছায়া নিবারণ ও অবসর সময়ও কাটাতেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য, এই বটগাছের নিচে অনেকেই মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে পূজা করে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে আরোগ্যের প্রত্যাশা রাখে। সাধারণ মানুষ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এখানে মানতও করতেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বটগাছটিতে ফুল দিয়ে পূজা করে। তাদের বিশ্বাস, গাছটির ভেতর একটি বড় সাপ থাকে। অমাবস্যা পূর্ণিমার রাতে সে বের হয়। এরপর ঘুরে-ফিরে ভোর হওয়ার আগে আবারও বটগাছের ভেতরে ফিরে যায়। তবে এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কোনও ঘটনা নেই।

জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, বটগাছটি কাটার বিষয় আমরা জেনেছি। গাছটির গোড়া এখনও আছে, জীবন্তও আছে। জেলার বন কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ আমাদের অনেকেই ওই স্থানে গিয়ে গাছকাটা বন্ধ করেছেন। তারা আমাকে জানিয়েছে, স্থানীয় জনতা গাছটি কাটার চেষ্টা করেছেন। যারা কাটার উদ্যোগ নিয়েছেন তাদের আমরা ডেকেছি, কারণ জানতে চেয়েছি। তারা বুঝতে পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন। যারা এ ধরণের অন্যায় কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

জানতে চাইলে জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বটগাছ একটি সংরক্ষিত প্রজাতি। সেটি কাটার প্রশ্নই ওঠে না। এর ফল খেয়ে অনেক প্রজাতির পাখিরা বেঁচে থাকে। এলাকার শতবর্ষী বৃক্ষগুলোকে চিহ্নিত করে এদের সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।