Image description

বর্ষার ভরা মৌসুম শুরুর ঠিক আগেই রাজশাহীর পদ্মায় একটি বাঁধ সংস্কার শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মাত্র ১১০ মিটারের এই কাজের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মিটারে খরচ ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৩ টাকা, যা অস্বাভাবিক বলছেন ঠিকাদাররা। অভিযোগ উঠেছে, লুটপাটের উদ্দেশ্যেই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মহানগরীর পুলিশ লাইনসের ঠিক বিপরীতে এই সংস্কার কাজ চলছে। পুলিশ লাইনসের পাশেই রয়েছে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সরকারি বাসভবন। যদি এই স্থানে ভাঙন শুরু হয়, তাহলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনা পদ্মার গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দু-এক বছর পরপরই পদ্মায় নতুন পানি আসার সময় বাঁধের ওই স্থানটিতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলতে দেখা যায়। এবারও পানি আসার আগে আগে কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঁধের ঠিক বিপরীতে পুলিশ লাইনসের ভেতরে রয়েছে একটি পুকুর। ২০০ মিটারের কম দূরত্বে পাশাপাশি দুটি জলাধার থাকলে মাটির নিচ দিয়ে পানি চলাচল হয়। এর ফলে বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বাঁধটি বারবার সংস্কার করতে হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শ্রীরামপুর এলাকার টি-গ্রোয়েন থেকে কেশবপুর বটগাছ পর্যন্ত ১১০ মিটার বাঁধ রক্ষায় বরাদ্দ এসেছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে বাঁধের ওপরের দিকে ১২ মিটার ব্লক এবং নিচে ১৫ মিটার বালুর বস্তা ফেলা হবে। বস্তার নিচে থাকবে খোয়া ও বালুভর্তি ড্রেন, যাতে পানি জমে না থাকে। ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় দরপত্রের মাধ্যমে খাজা তারেক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁধের দক্ষিণ পাশে পদ্মায় বড় একটি চর গড়ে উঠেছে। সেই চরেই এখন বালুর বস্তা ভরা হয়েছে। চর থেকে নৌকায় করে বালুর বস্তা এনে পাড়ে ফেলা হচ্ছে। বস্তা ভরার জন্য শ্রমিকরা বস্তাপ্রতি ১৪ টাকা করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।

কাজ তদারকির জন্য ছিলেন পাউবোর কার্যসহকারী মাহবুব আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম। তারা জানান, মোট ৩২ হাজার বালুর বস্তা ফেলা হবে। এর মধ্যে ডাম্পিংয়ে (পানির নিচে) থাকবে ২৬ হাজার ৫০০ বস্তা। আর স্লোপে (পানির ওপরে) থাকবে বাকি বস্তা। ওপরের দিকে কিছুটা অংশে থাকবে আগের পুরনো কংক্রিটের ব্লক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাউবো রাজশাহীর কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, অল্প একটু বাঁধ সংস্কারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি মিটারের জন্য ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা বরাদ্দ অস্বাভাবিক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের। জরুরি এই সংস্কারের প্রাক্কলন করেছিলেন রাজশাহী পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হুরায়রা। এ বিষয়ে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কোনো প্রশ্ন থাকলে তথ্য অধিকার আইনে ফরম পূরণ করে আবেদন দিতে হবে। এর বাইরে তিনি কথা বলতে পারবেন না। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, বারবার দেখি নদীতে পানি আসার পর সংস্কার কাজ শুরু হয়। পানিতে কত বালুর বস্তা ফেলে বা কী করে তার কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। দেশে এখনো ৫০ বছর আগের পরিকল্পনায় কাজ চলে। এগুলো বন্ধ করে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা উচিত যাতে ১০ বছরে আর হাত দেওয়া না লাগে। এই কাজে অতিরিক্ত বরাদ্দ হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।

জানতে চাইলে রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, এখন যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা জরুরি ভিত্তিতে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার। এটা স্থায়ী নয়, জরুরি ভিত্তিতে এই বরাদ্দ পেয়ে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কাজ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী সমাধান করতে গেলে প্রায় ১২ কোটি টাকা দরকার। একটা প্রকল্পের ভেতর এই অংশটুকু রেখে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি। তাই স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।