Image description

রাজধানী ঢাকায় কাগজে-কলমে নিষিদ্ধ হলেও রাস্তায় দাপটের সঙ্গে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। যাত্রী পরিবহনে এদের ভূমিকা যেমন বেড়েছে, তেমনি বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, বিশৃঙ্খলা এবং বিদ্যুতের ওপর চাপ। নিয়ম না মানা এই তিন চাকার বাহন নিয়ে প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগের পরও লাগাম টানা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজি বাইকের সংখ্যা ৬০ লাখের বেশি, এর মধ্যে রাজধানীতেই আছে প্রায় ১২ লাখ। এসব যানবাহনের কারণে শুধু গত এক বছরে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার অন্তত ১৩ শতাংশ ঘটেছে।

নগরের পুরান ঢাকা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, উত্তরাসহ এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে অবৈধ এসব অটোরিকশা চলাচল করছে না। এমনকি অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানীতেও চলছে এসব বাহনের দৌরাত্ম্য।

দুর্ঘটনার ঝুঁকি, নিয়ন্ত্রণহীন গতি

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা, দুর্বল ব্রেকিং সিস্টেম ও অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।যানবাহনের মান ও সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়াই দিনের পর দিন রাস্তায় নামছে নতুন নতুন অটোরিকশা। একই সঙ্গে এ বাহনের কারণে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকরা। আয় কমে যাওয়ায় তাঁদের অনেকেই পেশা ছাড়ার চিন্তা করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্যাডেল রিকশাচালক ইমতিয়াজ আলম বলেন, ১৫ বছর ধরে রিকশা চালাই, এমন কষ্ট আগে হয়নি। এখন জমার টাকা তুলতেই জান বের হয়ে যায়।

গুলশানে উত্তেজনা, সংঘর্ষও

১৯ এপ্রিল থেকে গুলশান ও বনানী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পরদিনই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২১ এপ্রিল বনানীর ১১ নম্বর রোডে প্যাডেল রিকশাচালকদের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকদের হাতাহাতি হয়। এ সময় মোটরসাইকেল চালকরাও সংঘর্ষে জড়ান।

ডিএনসিসির (উত্তর) প্রশাসক মো. এজাজ বলেন, সবাই বলেন বন্ধ করতে, কিন্তু নিজেরাই আবার এসব বাহনে চড়েন। আমরা প্রধান সড়কে এসব অটোরিকশা বন্ধে কড়াকড়ি করছি।

অটোর কারখানা গ্যারেজেই

ঢাকার কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট ছোট গ্যারেজ, যেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই ফাইবার বডি, লোহার ফ্রেম কিংবা ভ্যাননির্ভর এসব রিকশা সড়কে নামছে।

এক কারিগর জানান, প্রতিদিন গ্যারেজ থেকে চার-পাঁচটি রিকশা সরবরাহ দিই। অর্ডার এলেই তৈরি করি। আরেক গ্যারেজ মালিক বলেন, এই এলাকায় ৫০টি গ্যারেজ আছে, প্রতিদিন দুই-আড়াই শ নতুন অটো রাস্তায় নামছে।

সমাধান কী?

ডিএনসিসির তথ্য মতে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এরই মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অটোরিকশার ডিজাইন তৈরি করছে। সেটি অনুমোদিত হলে নির্দিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটো চলাচলের সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় দুর্ঘটনার মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত গতি। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে জনসংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়, সেখানে গণপরিবহন হয় প্রধান বাহন। আমাদের দেশে উল্টো মোটরসাইকেল আর অটোরিকশাই ভরসা। তাঁর মতে, প্রথমে গণপরিবহন ঠিক করতে হবে। তারপর ধাপে ধাপে এসব যানবাহন তুলে দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির উপকমিশনার তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, জরিমানা, ডাম্পিংসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবু ব্যাটারিচালিত রিকশা থামানো যাচ্ছে না।