Image description
অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেষে দেশের ২০টি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে এ ২০ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত থাকায় অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি, বেসরকারি পাঁচটি, শরিয়াহভিত্তিক আটটি, বিশেষায়িত দুটি এবং বিদেশি একটি ব্যাংক। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ১৬টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলেও পরের তিন মাসে নতুন করে চারটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বলে জানাচ্ছে ব্যাসেল-৩-এর অধীনে মূলধন সংরক্ষণ বাফার সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০টি ব্যাংক ৩৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত বা সিআরএআর কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরের শেষে ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম একটি মাত্রায় মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা (এর মধ্যে যেটি বেশি) মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো ব্যাংক এ শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে, তা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বলে গণ্য হবে।

মূলধনের এ অর্থ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং ব্যাংকের মুনাফা থেকে সংরক্ষিত হয়। যেসব ব্যাংকের মূলধনে ঘাটতি থাকে, তারা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে না। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো প্রায়ই স্থানীয় ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি যাচাই করে তারপর ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর শীর্ষে অবস্থান করছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এরপরের তিনটি অবস্থান দখল করে আছে শরিয়াহভিত্তিক তিনটি ব্যাংক। এর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ১৮ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ১৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ১৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঘাটতি নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বৃদ্ধির কারণে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। ফলে অনেক ব্যাংক তাদের মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের মূলধন ঘাটতিকে আরও তীব্র করেছে। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের নতুন করে মূলধন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এ লোকসান বহন করছিল। তবে আগের সরকার দ্বারা তারা সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব তথ্য গোপন ছিল। এখন সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতি হলে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস পায়, যা তার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করে। এসব ব্যাংক প্রভিশন বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না এবং ধীরে ধীরে গ্রাহকও হারাবে। মূলধন ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, ক্রেডিট রেটিংয়ে পতন হবে। বিদেশি ব্যাংকগুলোও তাদের সঙ্গে লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করবে। এতে কিছু ক্ষেত্রে এলসি খোলার সময় মার্জিনও বেড়ে যেতে পারে।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের ৫ হাজার ১৯২ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৮৬ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের ৯ হাজার ২৯ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ হাজার ৭৯৯ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ৬৫৬ কোটি এবং এবি ব্যাংকের ৫১৮ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

শরীয়াহভিত্তিক অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১১ হাজার ৭০৯ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৯০৫ কোটি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯১০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১ হাজার ৮৬২ কোটি এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ২৫৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৪৭০ কোটি এবং বিদেশি হাবিব ব্যাংকের ১২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ২ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বর শেষে যে মূলধন ঘাটতি দেখা গেছে, মার্চ ২০২৫-এর প্রতিবেদনে তা আরও বাড়তে পারে। কারণ মার্চ থেকে প্রভিশনিং হার আরও কঠোর করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) শ্রেণিভুক্ত ঋণের জন্য প্রভিশনিং হার ১ শতাংশ থাকলেও মার্চ থেকে তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার ও নতুন মূলধন সংযোজন করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় যদি ব্যাংক প্রভিশন স্থগিত সুবিধা দেয়, তাহলেও কিছুটা ঘাটতি কমে আসতে পারে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কিছু ব্যাংককে শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর যারা ব্যর্থ হবে, তারা হয়তো একীভূত (মার্জার) হতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার এক আলোচনা সভায় বলেন, যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি রয়েছে সেসব ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে একটা পথ বের করা উচিত। পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছরের একটি সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। যদি সে সময়ের মধ্যে তারা সংকট কাটাতে না পারে, তাহলে তাদের রিমুভ (অপসারণ) করা হবে। তা না হলে ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।

এ জেড ভূঁইয়া আনাস 8

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেষে দেশের ২০টি ব্যাংকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে এ ২০ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত থাকায় অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর শেষে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি, বেসরকারি পাঁচটি, শরিয়াহভিত্তিক আটটি, বিশেষায়িত দুটি এবং বিদেশি একটি ব্যাংক। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষে ১৬টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলেও পরের তিন মাসে নতুন করে চারটি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে বলে জানাচ্ছে ব্যাসেল-৩-এর অধীনে মূলধন সংরক্ষণ বাফার সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০টি ব্যাংক ৩৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত বা সিআরএআর কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরের শেষে ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম একটি মাত্রায় মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা (এর মধ্যে যেটি বেশি) মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো ব্যাংক এ শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে, তা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বলে গণ্য হবে।

মূলধনের এ অর্থ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ এবং ব্যাংকের মুনাফা থেকে সংরক্ষিত হয়। যেসব ব্যাংকের মূলধনে ঘাটতি থাকে, তারা শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করতে পারে না। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলো প্রায়ই স্থানীয় ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি যাচাই করে তারপর ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর শীর্ষে অবস্থান করছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ৫২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। এরপরের তিনটি অবস্থান দখল করে আছে শরিয়াহভিত্তিক তিনটি ব্যাংক। এর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি ১৮ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ১৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এবং চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ১৩ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঘাটতি নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বৃদ্ধির কারণে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। ফলে অনেক ব্যাংক তাদের মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের মূলধন ঘাটতিকে আরও তীব্র করেছে। বর্তমানে যেসব ব্যাংকের নতুন করে মূলধন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এ লোকসান বহন করছিল। তবে আগের সরকার দ্বারা তারা সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব তথ্য গোপন ছিল। এখন সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে।

তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতি হলে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস পায়, যা তার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করে। এসব ব্যাংক প্রভিশন বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না এবং ধীরে ধীরে গ্রাহকও হারাবে। মূলধন ঘাটতির কারণে এসব ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে, ক্রেডিট রেটিংয়ে পতন হবে। বিদেশি ব্যাংকগুলোও তাদের সঙ্গে লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করবে। এতে কিছু ক্ষেত্রে এলসি খোলার সময় মার্জিনও বেড়ে যেতে পারে।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের ৫ হাজার ১৯২ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৬৮৬ কোটি, বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের ৯ হাজার ২৯ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭ হাজার ৭৯৯ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ৬৫৬ কোটি এবং এবি ব্যাংকের ৫১৮ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

শরীয়াহভিত্তিক অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১১ হাজার ৭০৯ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৯০৫ কোটি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৯১০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১ হাজার ৮৬২ কোটি এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ২৫৪ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৪৭০ কোটি এবং বিদেশি হাবিব ব্যাংকের ১২ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ২ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বর শেষে যে মূলধন ঘাটতি দেখা গেছে, মার্চ ২০২৫-এর প্রতিবেদনে তা আরও বাড়তে পারে। কারণ মার্চ থেকে প্রভিশনিং হার আরও কঠোর করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ) শ্রেণিভুক্ত ঋণের জন্য প্রভিশনিং হার ১ শতাংশ থাকলেও মার্চ থেকে তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার ও নতুন মূলধন সংযোজন করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় যদি ব্যাংক প্রভিশন স্থগিত সুবিধা দেয়, তাহলেও কিছুটা ঘাটতি কমে আসতে পারে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কিছু ব্যাংককে শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়া হতে পারে। কিছু ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর যারা ব্যর্থ হবে, তারা হয়তো একীভূত (মার্জার) হতে বাধ্য হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার এক আলোচনা সভায় বলেন, যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি রয়েছে সেসব ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে একটা পথ বের করা উচিত। পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছরের একটি সময় বেঁধে দেওয়া উচিত। যদি সে সময়ের মধ্যে তারা সংকট কাটাতে না পারে, তাহলে তাদের রিমুভ (অপসারণ) করা হবে। তা না হলে ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।