
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলায় কারাগারে আটক সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর (শ্যোন অ্যারেস্ট) আবেদন করা হয়েছে আজ রোববার। আগামীকাল সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়াল শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোতোয়ালি থানার হত্যা মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এটি ভার্চ্যুয়াল শুনানি হবে।
পুলিশ কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন আরও বলেন, হত্যার পাশাপাশি পুলিশের কাজে বাধাদান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলাসহ তিন মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। এগুলোর ভার্চ্যুয়াল শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ওই মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বুধবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায় দেন। ফলে ওই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস জামিন পান। তবে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আজ শুনানি দিন ধার্য থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকীর মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারিক কার্যক্রম অর্ধবেলার পর স্থগিত রাখা হয়। এতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আজ চেম্বার আদালতে শুনানির কথা থাকলেও তা হয়নি।
এখন চিন্ময় দাসকে যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে, সেটি গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনা। সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।