Image description

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে যে দাম্পত্য কলহ হচ্ছে তা গড়াচ্ছে খুনাখুনিতে। আবার সাংসারিক অশান্তির কারণে অনেক অভিভাবক নিজের সন্তানকে নৃশংসভাবে খুন করছেন। গা শিউরে ওঠা এসব হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা সবকিছুকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারালো অস্ত্র দিয়ে মৃতদেহ কয়েক টুকরা করে মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গলা কেটে, হাতুড়ি দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া, বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আর ঘটনার পেছনে কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডগুলোতে যে অপরাধীরা জড়িত তাদের কেউ মাদকাসক্ত, কেউ কয়েক বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অপরাধীদের কেউ আবার মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌতুক আদায়ের জন্য, পরকীয়ায় বাধা দেওয়া, একাধিক বিয়ের কারণে দাম্পত্য কলহ, মানসিক অসুস্থতা ও বিষণ্নতার কারণে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে লামিয়া আক্তার (২২) ও স্বপ্না আক্তার (৩৪) নামের দুই বোন এবং লামিয়ার শিশু সন্তান আবদুল্লাহকে (৪) হত্যা করে তাদের লাশ খণ্ড-বিখণ্ড করে কেটে মাটি চাপা দেয় লামিয়ার মাদকাসক্ত স্বামী মো. ইয়াছিন। গত মাসের প্রথমদিকে লামিয়াদের ভাড়া বাসার সামনে রাস্তার পাশে গর্ত করে এগুলো পুঁতে রাখে ইয়াছিন। পারিবারিক কলহের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা ইউনিয়নের কপাটিয়া গ্রামে আমিনুল ইসলাম তার স্ত্রী নাদিরা আক্তারকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এরপর মোবাইলে এই ঘাতক স্বামী তার শ্বশুরকে মেয়েকে হত্যা করার খবর দেন। গত ২৪ এপ্রিল সকালে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের কাপাটিয়াপাড়ার আনন্দ বাজারে এই ঘটনা ঘটে। এর আগেও আমিনুল তার প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করে ৯ বছর সাজা ভোগ করেন। নাদিরার স্বজনরা জানান, এই দম্পতির মধ্যে প্রায়ই পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। পুরান ঢাকার বংশালে হাতুড়ি দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী মো. ইব্রাহীমকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির বংশাল থানা পুলিশ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি বংশালের সিক্কাটুলী লেনের নিজ বাসা থেকে ইব্রাহীমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার দিন সন্দেহের জের ধরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে মাকসুদার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ইব্রাহিম। এতে ঘটনাস্থলেই মাকসুদার মৃত্যু হয়। বাজার থেকে পুঁটি মাছ কিনে এনে স্ত্রীকে কাটতে বলেন বাছির উদ্দিন (৩৫)। কিন্তু তার স্ত্রী পুঁটি মাছ কাটতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বাছির।

গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকার উত্তর ত্রিশ গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গাজীপুরের শ্রীপুরে আম্বিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূকে গত ২ মে পিটিয়ে হত্যা করে আসাদুল্লাহ। স্থানীয়রা জানান, আম্বিয়া ছিলেন আসাদুল্লাহর দ্বিতীয় স্ত্রী। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে আম্বিয়ার মাঝেমধ্যে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন রাতেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এ সময় স্ত্রীকে আসাদুল্লাহ মারধর করেন। সকালে আম্বিয়ার লাশ মেঝেতে পান তাদের প্রতিবেশীরা। এ ছাড়া গাজীপুরের টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায় মালিহা আক্তার (৬) ও আবদুল্লাহ বিন ওমর (৪) নামের দুই শিশুকে তাদের মা সালেহা বেগম বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে পুলিশ জানান। গত ১৮ এপ্রিল রাতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সালেহা দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এলিনা খান বলেন, বাংলাদেশে এখন প্রচণ্ড অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা কাজ করছে। আছে সামাজিক অস্থিরতাও। আর এসবের প্রভাব পড়ছে পরিবারগুলোর ওপর। একজন মানুষ যখন ঘরের বাইরে যান তখন বিভিন্ন ঘটনায় তার ওপর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়। রাষ্ট্র-সমাজ স্থিতিশীল থাকলে পরিবারও ভালো থাকে। উন্নত দেশগুলোতে যখন কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তখন সেই রাষ্ট্র এজন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মানসিক সমস্যা সমাধানে সচেতনতা দরকার। মানসিক অস্থিরতার জন্য একশ্রেণির মানুষ অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে। রাষ্ট্র থেকে প্রতিটি জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মানসিক অস্থিরতা হ্রাসে কার্যকর ব্যবস্থা রাখা উচিত।