Image description

ভোলার চরফ্যাশনের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিতে জড়িত। তিনি উপজেলার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কিন্তু কলেজ শিক্ষক হিসেবে একাধিকবার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন জালিয়াতির মাধ্যমে। অন্তত দুবার অন্যের নাম ও পদবি জাল করে বাগিয়েছিলেন এমপিও। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে হয়েছিলেন উপজেলার বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ। আবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে করেন পদত্যাগ। পুনরায় সেই পদ দখল করতে কষছেন নানা ছক।

বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর অবৈধভাবে তার আগের পদে ফিরতে চান। এ কাজে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের হাত করে এগোচ্ছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তি হতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মাহদি হাসান জুয়েল। তিনি এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠিও লিখেছেন। সেই আবেদনে স্বাক্ষর রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলামেরও।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বেগম রহিমা ইসলাম কলেজটি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি এমপিওভুক্ত হয়। পরে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। চার দিন পর সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন তৎকালীন গভর্নিং বডির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। পরে সভাপতি জ্যেষ্ঠ পাঁচ শিক্ষকের মধ্য থেকে শরীফুলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব বিভাগেও জানানো হয়।

এদিকে জাহাঙ্গীর অধ্যক্ষ থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তদন্তের জন্য লিখিত আবেদন দিয়েছিলেন স্থানীয় বিশিষ্ট সমাজসেবক এবি সিদ্দিক মিয়া। ওই আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর ২০০০ সালে রসুলপুর নাজিম উদ্দীন আলম ডিগ্রি কলেজে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে প্রভাষক পদে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় কলেজটির এমপিওভুক্তিতে তৃতীয় শিক্ষকের বিধান না থাকায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চরফ্যাশন কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহাবুদ্দিনের এমপিও শিটের নাম ও ব্যাংক হিসাব পরিবর্তন করে নিজের নামে মুদ্রণ করে ২০০৪ সাল এমপিওভুক্ত হন। সে সময় তিন থেকে চার মাস বেতন-ভাতাও ভোগ করেন।

এদিকে চরফ্যাশন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহাবুদ্দিনের জন্মতারিখ ১৩/০৮/১৯৪৪ হওয়ায় তার চাকরি মেয়াদ পূর্ণ হলে এমপিও শিট থেকে এমপিও ইনডেক্স নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর্তন হয়। এতে জাহাঙ্গীরের বিলও বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও থেমে থাকেননি জাহাঙ্গীর।

 

চরফ্যাশন ফাতেমা মতিন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক সালমা নাসরিনের এমপিও ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে পুনরায় ২০০৫ সালে ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেতন ভাতা তোলেন। পরের বছর বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।

 

এমপিও জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে জাহাঙ্গীর আলম আমার দেশকে বলেন, ‘আমি কলেজে থেকে পদত্যাগ করিনি, সে সময় আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। আমি জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি ভোলার জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালককে লিখিতভাবে জানাই।’ চরফ্যাশন উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেগম রহিমা ইসলাম কলেজের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমীন আমার দেশকে বলেন, ‘আমি সভাপতি থাকাকালে জাহাঙ্গীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।’