চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মাঝের চরে সাত খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের দুই দিনের ধর্মঘটে অচল হয়ে গেছে নৌপথ। শুক্রবার সকাল থেকেই বন্ধ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান।
এদিকে প্রশাসন বলছে, নৌযান শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ধর্মঘটের সমাধান আসবে।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের চাঁদপুর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ আ মাহফুজ উল আলম মোল্লা।
যুগ্ম পরিচালক বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে আমাদের ঘাটগুলো অচলের মুখে। এই অবস্থার সমাধানে আমরা রবিবারের মধ্যে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সমাধানে বসব।’
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে পুরানবাজার, চৌধুরীঘাট, লঞ্চঘাট ও রঘুনাথপুর- এই চারটি ইজারাভুক্ত ঘাটে জাহাজ থেকে মাল লোড-আনলোড হয়ে থাকে। এর মধ্যে রঘুনাথপুর ঘাটটি ৪৪ হাজার টাকায় এবং অন্য ঘাটগুলোর ইজারা বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা।
প্রতিটি ঘাটে দিনে গড়ে ৮০-৯০টি মালবাহী, তেল-গ্যাসবাহী, বালুবাহী নৌযানে লোডিং-আনলোডিং হয়। অর্থাৎ গড়ে জেলার ঘাটগুলোতে দিনে মোট ৩০০-৪০০ জাহাজে কাজ হয়। শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই চার ঘাটের বাইরে চাঁদপুরে ইজারাবিহীন ঘাট আছে আরও ২০টির বেশি। কোটি কোটি টাকার কাঁচামালের আমদানি-রপ্তানি এই নৌপথেই হয়ে থাকে।
কর্মবিরতিতে থাকা শ্রমিকরা বলছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট চলবে। আর এ দাবি শুধু জেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা দেশে চলছে।
ধর্মঘটের মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। দাবি আদায়ের আরেঅচনা না এগালে এটিও বন্ধ করে দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান শ্রমিকরা।
এর আগে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, সাতজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ২৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট সফল করতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বেসিক ইউনিয়ন ও শাখাগুলোর নৌযান শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন তারা।
এম ভি আল-বাখেরা জাহাজে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ইরফান প্রকৃত অপরাধী কি না এ নিয়ে সংশয় আছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হারুনুর রশীদ বলেন, ‘চাঁদপুরে জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গার প্রিন্ট এবং গ্রেপ্তারকৃত ইরফানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে কি না তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই। এছাড়া ইরফান একা জাহাজ চালাতে কতটা পারদর্শী সেটাও সরাসরি গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা সরাসরি দেখতে চাই।’
এ ঘটনায় মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারসহ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘তা না হলে আমাদের এই ধর্মঘট চলবে।’
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, নৌযান শ্রমিক নেতাদের দাবি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ধর্মঘটের সমাধান আসবে।
(ঢাকাটাইমস