
খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকা। দেশেই এক টুকরো বিদেশ, এখানে আসতে লাগে না পাসপোর্ট-ভিসা। খাগড়াছড়ি শহরসংলগ্ন জনপ্রিয় স্থান ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’ এখন স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে হয়ে উঠছে অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য।
উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, বিস্তীর্ণ ঘাসের মাঠ আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের দৃশ্য সব মিলিয়ে এই এলাকাকে স্থানীয়রা ভালোবেসে নাম দিয়েছে ‘নিউজিল্যান্ড’। মূলত খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় এই এলাকাটি প্রকৃতিপ্রেমী ও ঘুরে বেড়ানো মানুষের জন্য এক স্বর্গীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজ উপত্যকা ও ঠান্ডা আবহাওয়া অনেকটা নিউজিল্যান্ডের মতোই মনে হয়। সেই থেকেই নামকরণ ‘নিউজিল্যান্ড পাড়া’। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে মাত্র ১০ থেকে ২৫ মিনিটের মোটরবাইক, অটোরিকশার যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় এই এলাকায়। ভিসা-পাসপোর্ট কিছুই লাগবে না, লাগবে একটি মুক্ত মন আর প্রকৃতিকে ভালোবাসার চোখ।
স্থানীয় বাসিন্দা ঝানা দেওয়ান বলেন, আমরা এখানকার বাসিন্দা। প্রতিদিন বিকাল বেলায় এখানে ঘুরতে আসি। এখানে ঘুরতে এলে মন ভালো হয়ে যায়।
স্থানীয় পর্যটক লাইশ্রী ত্রিপুরা বলেন, প্রতিদিন বিকালে আমরা এখানে ঘুরতে আসি। এখানে এলে সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। খুবই ভালো লাগে।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. রাফিন বলেন, প্রথমবারের মতো খাগড়াছড়িতে আসছি। লোকমুখে নিউজিল্যান্ডের কথা শুনে আমরা এখানে এসেছি। জায়গাটি খুব চমৎকার। খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড শুধু একটা নাম নয়, এক চিরন্তন বাস্তবতা।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ বা ১৯৯৯ সালের দিকে জমির মাঝ দিয়ে একটি কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই ওই এলাকায় মানুষের যাতায়াত শুরু হয়। বিকালে অনেকেই ঘুরতে যেতেন সেখানে। তখন এক পাহাড়ি ভদ্রলোক এই রাস্তায় হেঁটে যেতে যেতে মন্তব্য করেন, ‘ঠিক যেন নিউজিল্যান্ডের বাতাস।’ এরপর থেকেই এলাকাটি নিউজিল্যান্ড নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে জমিতে বসতিও গড়ে ওঠে।
নিউজিল্যান্ড পাড়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো বর্ষার সময় আলুটিলা পাহাড়ের মেঘের ভেলা দেখা। এখানে শুধু পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতিই নয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তও দেখা যায় অসাধারণভাবে। আর ধান পাকলে নিউজিল্যান্ডের দুই পাশের জমিতে দেখা মেলে শত শত টিয়া পাখির। এ ছাড়া কাছাকাছি থেকে পাহাড়ি জনপদের জীবনযাত্রাও অনুভব করা যায়।
খাগড়াছড়ির ‘নিউজিল্যান্ড’ শুধু একটি নাম নয়, এটি এক অনুভব এক ভ্রমণপ্রেমীর স্বপ্নপূরণ। সময়, টাকা, ভিসার জটিলতা সব পেছনে ফেলে একদিনের ভ্রমণেই পেতে পারেন নিজের দেশেই বিদেশের স্বাদ!