Image description
পর্যটন নগরী কক্সবাজার » মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ নেতার নেতৃত্বে এই দখলদারি । গত ৫ আগস্টের পরে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রটি । জাল কাগজ বানিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রটি দখল করেছে । স্থাপনা না সরালে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান : প্রশাসন

কক্সবাজার সাগরপারের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল - মোটেল জোনের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২ একর ৩০ শতক খাসজমি দখল করে শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে । অভিযোগ উঠেছে , জাল কাগজ বানিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে হোটেল - মোটেল জোনের বাতিল করা প্লটের এই জমি দখল করেছে । জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( কউক ) সূত্র বলেছে , ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে কলাতলীর হোটেল - মোটেল জোনের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় ( ইসিএ ) ৪৯ টি প্লট বাতিল করা হয়েছিল । এরপর থেকে প্লটগুলো জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । সেই বাতিল করা প্লটে ২ একর ৩০ শতক খাসজমি সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত নামের এক ব্যক্তির মালিকানা দাবি করে জাল কাগজপত্র বানিয়ে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় । চক্রটি গত ৩ সেপ্টেম্বর জাল কাগজ দাখিল করে হাইকোর্ট থেকে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশও নিয়ে আসে । এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে । এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন । কিন্তু চক্রটি জমিটি ভরাট করে ঘেরার ভেতরে সেমিপাকা করে আট লাইন দোকান তৈরি করেছে । প্রতিটি লাইনে ১২ টি দোকান রয়েছে ।

যাঁর দখলে এ জমি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ওবাইদুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে জমিটি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে । এই চক্রে রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । চক্রটি ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এই জমির দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে । জমির দখলকে কেন্দ্র করে সে সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোনাফ সিকদার গুলিবিদ্ধ হন । এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছিল । মেয়রকে মামলা দেওয়ার ঘটনায় সে সময় দুদিন আন্দোলন - সংগ্রামে অচল ছিল পর্যটন শহর । দীর্ঘদিন থেমে থাকার পর একই চক্র গত বছরের ৫ আগস্টের পরে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে । এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওবাইদুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি ।

যেভাবে ধরা পড়ে জাল কাগজপত্র নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায় , ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই জমি ব্যবহারের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( কউক ) বরাবর আবেদন করেন সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত । এরপর কউক ভূমি অফিসে জমির কাগজ যাচাই - বাছাই করতে গেলে জাল - জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে । গত বছরের ১২ জুন কউকের উপনগর- পরিকল্পনাবিদ মো . তানভীর হাসান রেজাউল জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কাছে এক চিঠিতে লেখেন , কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসের দুটি সরকারি নথি জাল করে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন করা হয়েছে । এই চিঠিতে আরও দেখা যায় , সচ্চিদানন্দের দাখিল করা ৭৯০০ নম্বর বিএস খতিয়ানটি জাল । তিনি পরপর দুবার জাল কাগজ দাখিল করার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয় । তানভীর বলেন , ‘ যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে কউকের ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয় ।

সুগন্ধা পয়েন্টের ওই জমিতে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি । ” জাল খতিয়ানে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার ( ভূমি ) আরিফ উল্লাহ নিজামীর । তুলনাকারক হিসেবে ভূমি অফিসের নাজির মোহাম্মদ আলমগীর ও নকলকারক হিসেবে কর্মচারী মোহাম্মদ আয়াছের স্বাক্ষর আছে । টেকনাফে কর্মরত আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন , ' আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান সৃজন করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে ।' 

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি ) শারমিন সুলতানা বলেন, জাল কাগজ বানিয়ে সরকারি খাসজমি দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সচ্চিদানন্দসহ দুজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে । এ ছাড়া ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে সচ্চিদানন্দ নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি । সচ্চিদানন্দকে দেখেননি কেউ সচ্চিদানন্দের ঠিকানা দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার সতীশ বাবু লেন এলাকায় । তাঁর বাবার নাম নুপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত । এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন , ভূমি অফিস , কউক কিংবা দখলে নেওয়া জমির আশপাশে সচ্চিদানন্দ নামের এই ব্যক্তিকে কেউ দেখেননি । সদ্য বদলি হওয়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব ) বিভীষণ কান্তি দাস বলেন , সচ্চিদানন্দ নামের এই ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব তাঁরা পাননি । তাঁকে কোনো সময় ভূমি অফিস বা রেভিনিউ অফিসে দেখা যায়নি । উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন , জাল - জালিয়াতির মাধ্যমে একটি চক্র সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত নামের অস্তিত্বহীন এই ব্যক্তির নামে সরকারি জমি দখল করছে । অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব ) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন , ‘ সরকারি খাসজমি দখলের বিষয়টি নজরে আসার পর সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে গত সোমবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । শিগগির না সরালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে । '