
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল এরই মধ্যে ৯ মাস পূর্ণ হতে চলেছে। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগোল এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে, তা এখনো খুব স্পষ্ট নয়। সংস্কার ও নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কখনো নৈকট্য ও কখনো দূরত্বের দোলাচল চলমান। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে বলেও অনেকের ধারণা।
প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন কি সংস্কারের প্রতিপক্ষ? নির্বাচন চাওয়া কি অপরাধ? সময় যত পার হচ্ছে নির্বাচনের চাপ বৃদ্ধি এবং এসংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কিছু মন্তব্য জনমনে নানা বিষয়ে অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। কেউ বলছেন, নির্বাচন ছাড়া ডিক্রি জারি করে সংস্কার হবে বালুতে গাঁথুনি। শক্ত ভিত্তির ওপর সংস্কার করতে হলে নির্বাচন অপরিহার্য। কারো মন্তব্য, নির্বাচনের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার গত শুক্রবার বগুড়া প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এই মন্তব্য করেন।
দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে জানিয়ে তারেক রহমান প্রশ্ন রাখেন, ‘এর পরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এত সময় ক্ষেপণ করছে? এ নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়েই চলছে।’ গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলা হয়। সরকারের এই বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচনের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে হলে ওখান থেকে বের হয়ে এসে দেন। ওখানে থেকে নয়। রাজনীতি করার অধিকার আপনারও আছে। কিন্তু দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারে কেউ যদি রাজনীতি করেন, সেটা জাতি মেনে নেবে না, জাতি চায় না।’
গত ২০ এপ্রিল বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারা বলেন, অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। সরকার নির্বাচন নিয়ে অহেতুক কালক্ষেপণ করলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের মধ্যে বৈঠক করে প্রয়োজনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা হবে। সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা নির্বাচন করে সংস্কার করবে, তারাই আসল সংস্কারের পক্ষে আর যারা নির্বাচন ছাড়া সংস্কার চায় একটা ডিক্রি জারি করে, সেটা বালুতে গাঁথুনি। শক্ত ভিত্তির ওপর সংস্কার করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ লাগবে, সে জন্য একটা নির্বাচন অপরিহার্য।’
উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সাইফুল হক। গতকাল কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে আন্তরিক। একই সঙ্গে খুনিদের বিচারের দাবিতে গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সবাই সোচ্চার। সংস্কার ও বিচার নির্বাচনের জন্য কোনো বাধা নয়। তাই সংসদ নির্বাচন কোনোভাবেই ডিসেম্বরের পর নেওয়ার সুযোগ নেই। যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে, তাদের নতুন কোনো সংকট সৃষ্টির অশুভ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করি।’
মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত করে যখনই নির্বাচন দেওয়া হবে তখনই নির্বাচন করতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার। গতকাল কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায়, এত দিনের আলাপ-আলোচনা ও গণ-অভ্যুত্থানের পরে মৌলিক সংস্কার বলতে একটা জিনিস দাঁড়িয়েছে; যেটা আপনাকে এখনই করতে হবে এবং এখনই করা সম্ভব। এটা করার পর নির্বাচনে গেলে সেই নির্বাচন ডিসেম্বর কি জানুয়ারি বা জুন, তা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
শুরু থেকেই দ্রুত নির্বাচনের দাবি : অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই কবে নাগাদ নির্বাচন হবে তা জানতে উদগ্রীব রাজনৈতিক দলগুলো। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। দলগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত সংলাপের আহবানও জানানো হয়। এরপর গত ২৯ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপকভিত্তিক সংলাপ শুরুর অনুরোধ জানান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৩১ আগস্টের বৈঠকে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরতে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহবান জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কার, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয় বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলোকে জানান, নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার।
সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য : গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করে ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচনের লক্ষ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো পরিস্থিতিতে পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
গত ১৬ ডিসেম্বর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো ধারণা দেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’
এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি জাপানের ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (এনএইচকে) দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, এই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। গণতন্ত্রের পথে নির্বাচন একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তিনি চান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হোক। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে।
গত ১৭ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই তা করে ফেলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনো আগামী বছরের জুনের বদলে মার্চের কথাও বলেছেন।
গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক করেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রথমে গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সংশোধিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের সময় আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে বলা হয়। এর আগেও কখনো ডিসেম্বর, কখনো ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলে জানানো হয়।
ডিসেম্বর পার করতে চায় না ইসি : এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন কমিশন চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না বলে জানিয়েছেন। গত ১০ মার্চ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে জানতে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’
আন্তর্জাতিক মহল থেকে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনাগুলোতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার বিষয়ে আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনা জানতে চান। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই এটি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতিও চলতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। গত ১৬ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ইইউয়ের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারসহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মাইকেল মিলার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা দেশের জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আমরা সে লক্ষ্যে তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
অন্তর্বর্তী সরকার কবে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, তা নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহ রয়েছে।
উপদেষ্টাদের যেসব বক্তব্য নিয়ে আলোচনা : গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত, এই কথা কে বলল? আমাদের তো এই ছাত্ররা, জনতা—যারা নাকি এই পরিবর্তনটা এনে দিয়েছে, তারাই রাষ্ট্র গঠন করেছে, তারাই সরকার গঠন করেছে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত আমরা। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের যে চাহিদা, সেটা মেটানো।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১০ এপ্রিল সুনামগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাস্তা থেকে আমাকে বলতেছে, আপনারা আরো পাঁচ বছর থাকেন।’ গতকাল মঙ্গলবারও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়ে আমি কিছু বলিনি, এ কথা জনগণ বলেছে।’
সম্প্রতি কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আলজাজিরা’য় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে যে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা বলছে না, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও। আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের হস্তান্তর করো।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আগামী জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য হয় তার ওপর। তবে জুনের পর আর যাব না।’