
বরিশাল ও যশোরের দুটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যত বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দখলে। দুটি হাসপাতালেরই যন্ত্রপাতি প্রায় অচল। যেটুকু সচল, তা যথাযথভাবে ব্যবহারের লোক নেই। আর এই সুযোগে হাসপাতাল চত্বরে গড়ে উঠেছে দালালচক্র, যারা চিকিৎসকদের রেফার করা রোগীদের টানাটানি করে নিয়ে যাচ্ছে পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রতি পরীক্ষার পেছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের কমিশন—হাসপাতাল চত্বরেই গড়ে উঠেছে ‘রেফার ব্যবসা’।
বরিশাল : তিন রোগীতে এক দালাল, সব টেস্টই বাইরে
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগী আসে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু হাসপাতালের ভেতরে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে কিংবা প্যাথলজির বেশির ভাগ টেস্টই হয় না। যন্ত্রপাতি নষ্ট, রেডিওলজিস্টের পদ শূন্য আর প্যাথোলজি বিভাগে হয় হাতে গোনা চার-পাঁচটি পরীক্ষা।এই ফাঁকে হাসপাতাল চত্বরে দালালদের জমজমাট রাজত্ব। কেউ ডাক্তারের কক্ষ পর্যন্ত যেতে পারছেন না দালাল ছাড়া। কেউ ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হলে একাধিক দালাল চারপাশে ঘিরে ধরছে। বিনিময়ে দালাল পাচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্টদের অনেকেই জড়িত এই সিন্ডিকেটে।
সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল পদ্মা ডায়াগনস্টিক, যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন হাসপাতালের সাবেক আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা। বর্তমানে সেখানে আরো ১০টির বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হয়েছে, যার সব কটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে হাসপাতালের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পর্ক রয়েছে।
যশোর : যন্ত্রপাতির অভাবে অচল হাসপাতাল, রোগীদের ভরসা প্রাইভেট ক্লিনিক
২৫০ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিত্র ভিন্ন নয়। এখানে মেশিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব এতটাই প্রকট যে চিকিৎসা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে।
অকেজো যন্ত্রপাতির মধ্যে সাতটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে তিনটি অচল, আটটি আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনের সাতটি অচল, ৫২টি স্যাকার মেশিনের ৩৩টি অকেজো, সাতটি মাইক্রোস্কোপের পাঁচটি অচল, ৯৫টি এয়ারকুলারের ৬৫টি অচল, পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে দুটি অচল।
তা ছাড়া করোনারি কেয়ার ইউনিট থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল। চিকিৎসকদের মতে, এসব যন্ত্রপাতি মেরামতযোগ্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে ব্যবহারের অযোগ্য অবস্থায়।
তত্ত্বাবধায়ক হোসাইন সাফায়েত বলেন, ‘মাত্র এক মাস আগে যোগ দিয়েছি। বহু যন্ত্রপাতি ২০১৮ সালেই নিলামে গেছে। বাকিগুলো কী অবস্থায় আছে, তা এখনো জানার সুযোগ হয়নি।’
রোগীর ওপর চাপ, দালালের রাজত্ব
দুই হাসপাতালেই রোগীদের অভিযোগ একটাই—সরকারি হাসপাতালে এসে প্রাইভেট ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য দালালের পেছনে দৌড়াতে হয়। তাতে ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোগান্তিও বাড়ছে কয়েক গুণ।
চিকিৎসকরা বলেন, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সচল থাকলে এই দালালচক্রের কোনো অস্তিত্বই থাকত না। কিন্তু যন্ত্রপাতির অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতি মূলত রোগীদের ঠেলে দিচ্ছে দালালের হাতে।