
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা লুট করে নেওয়ার পরে এখনো তৎপর ফ্যাসিস্ট সরকারের সিন্ডিকেট। পলাতক আওয়ামী লীগের নেতারা মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে বর্তমান সময়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু নেতাকে নিয়ে আগের মতো সিন্ডিকেট তৈরির অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন সিন্ডিকেট ছাড়া মালয়েশিয়া কর্মী নেবে না। অসত্য এ যুক্তি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে।
গত সপ্তাহে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বংশো™ভূত দাতো আমিনের নেতৃত্বে সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শেখ রেহানা, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক সচিব ড. মনিরুস সালেহীন, সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ, সাবেক এমপি নিজাম হাজারী, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার, বায়রার সাবেক মহাসচিব আলি হায়দার চৌধুরীসহ সাবেক সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের যোগসাজশে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে চরম অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অনলাইন ফি ৫ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত বা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও কর্মীদের গুনতে হতো ৪-৫ লাখ টাকা। অতিরিক্ত এ টাকা যেত স্বৈরাচার সরকারের মদতপুষ্ট এসব মন্ত্রী-এমপির পকেটে। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও সরকারকে চরম বিব্রত করার জন্য বিদেশে বসে পুনরায় বর্তমান প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে আবারও সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো আমিনের মালয়েশিয়ান আইটি কোম্পানি বেসটিনেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে শুধু বিদেশ থেকে কর্মী আনার অনলাইন সাপোর্টের জন্য চুক্তি করে। কিন্তু আমিন দুই দেশের সরকারের অসাধু লোকদের ও তার পার্টনার রুহল আমিন স্বপনকে নিয়ে পদ্ধতির অপব্যবহার করে কর্মী পাঠানোর সব নিয়ন্ত্রণ নেন।
এরপর তারা বাংলাদেশ সরকারকে বলেন, শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চায়। অন্যদিকে মালয়েশিয়া সরকারকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার সিন্ডিকেট চায়। এভাবেই তারা বারবার সিন্ডিকেট তৈরি করেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকারকে সিলেকশন করার দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে এ সিন্ডিকেটের বীজ বপন করা হয়।
৫ কোটির নিচে মিলত না লাইসেন্স : রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স পেতে রুহুল আমিন স্বপন ও দাতো আমিনকে ৫ কোটি টাকা দিতে হতো। অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করে দাতো আমিনের বাংলাদেশের পার্টনার রুহুল আমিন স্বপন ২০১৬-১৮ এবং ২০২২-২৪ সালে মালয়েশিয়া যাওয়া শ্রমিকদের থেকে ১২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন। যদিও বর্তমানে নতুন সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত বা প্রায় ১৫ কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এ দুজন ব্যক্তির হাতে জিম্মি ছিল। এর ফলে তাদের সুনজর পাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়া বাকিরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এছাড়াও তারা প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। তাদের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচারের কারণে বারবার শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে।
এর ফলে কেবল গত বছরই বহির্গমন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া ১৭ হাজার কর্মীসহ মোট ৫০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এসব অনিয়মের কারণে অসংখ্য কর্মী চাকরি, বেতন ও বাসস্থান না পেয়ে মালয়েশিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। এর বিপরীতে উন্মুক্ত রিক্রুটমেন্ট পদ্ধতির দাবি জানিয়েছেন বায়রা নেতারা। তারা বলছেন, এসব সিন্ডিকেট বন্ধ হলে কর্মীরা কম খরচে বিদেশ যেতে পারবেন। পাশাপাশি সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যার যার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার বিধিতে কর্মী পাঠাতে পারবে। বারবার শ্রমবাজার বন্ধ হবে না ও কম সময়ে বেশি লোক যেতে পারবে এবং জনশক্তি রপ্তানিতে অরাজকতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকা পাচার বন্ধ হবে। স্মারকলিপিতে বায়রা নেতারা সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বিতর্কিত পদ্ধতি বাতিল, সমঝোতা স্মারকের সংশোধন এবং সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে থাকা ৪৫৩ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এ স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে আছেন- বায়রার সদ্য সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম ও নোমান চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আকবর হোসেন মঞ্জু ও ফখরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য খন্দকার আবু আশরাফ, সাবেক সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তফা মাহমুদ প্রমুখ।