Image description

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে অনলাইন জুয়ার ফাঁদ মানুষের অধঃপতন বয়ে আনলেও তেমন কোনো ভূমিকা নেই প্রশাসনের। এর ফলে দিনকে দিন লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে। খেলাধূলার মৌসুমে রমরমা জুয়া ব্যবসায় নিজেদের জড়িয়ে টাকাপয়সা হারিয়ে হতাশায় পড়ে নেশার জগতে পা বাড়াচ্ছে যুবসমাজ। দেখার নেই কেউই।
ঝিনাইদহের একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় মোবাইল ফোনে সারাদিন ব্যস্ত যুবসমাজ অনলাইনে কি করছে তা বুঝার কোনো উপায় নেই। সকাল দুপুর কিংবা মধ্যরাতে মোবাইল ফোনে চলছে জুয়ার আসরে ব্যস্ত থাকে তারা। এছাড়া একসাথে জড়ো হলে বিভিন্ন বয়সের মানুষের অনেকেই টাকার বিনিময়ে মোবাইলে লুডু খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অবৈধ এসব জোয়ার অ্যাপ এর মাধ্যমে জেলা থেকে প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়ে। চাঞ্চল্যকর অনলাইন জুয়ার আসর শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে। তবুও অজানা কারণে টনক নড়েনি সরকারের। এ নিয়ে সচেতন মহল ও অভিভাবকদের মধ্যে বেড়েছে শঙ্কা ও উদ্বেগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অনুমোদিত অ্যাপ্লিকেশন গুগল প্লে স্টোর ও আইফোনে অ্যাপল স্টোর-এ পাওয়া যায়। কিন্তু অবৈধ ও বিটিআরসির অননুমোদিত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে রমরমা অনলাইন জোয়ার-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এসব ক্ষতিকর অ্যাপ ব্যবহার করতে মোবাইল ফোনে বেড়েছে ভিপিএন সফটওয়্যারের ব্যবহার। এর আগে বিভিন্ন সময়ে এমন প্রতারক চক্রের কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও পুরোনো অপরাধ জগতে ফিরেছে। দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়াল প্রতারণা। ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে সার্চ করে ক্ষতিকর অনলাইন জুয়ার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা জুয়ায় ঢালছেন তরুণ-যুবকরো। অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। কেউ কেউ দেনার দায়ে হতাশাগ্রস্থ জীবন পার করছেন, আবার অনেকেই বেছে নিয়েছেন নেশার পথ। অনেক সুন্দরী যুবতীরাও নেমে পড়েছে এই অবৈধ কারবারে।

বিশ^স্ত সূত্র বলছে, অনলাইন এসব জুয়ার তদারকির জন্য রয়েছে স্থানীয় একাধিক এজেন্ট। যারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার গ্রাহকদের কথিত আইডি তৈরি করে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আবার নিজের আইডি চালু করার পর অন্য কাউকে দিয়ে আইডি চালু করাতে পারলে তাকে দিচ্ছেন বাড়তি বোনাস। বাড়তি বোনাস ও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন উঠতি তরুণ, যুবকসহ নানা বয়স ও পেশার মানুষ।

অনলাইন বেটিং সাইটে আসক্তদের অনেকে বলছেন, সাইট থেকে পাওয়া টাকা দেশের কোনো অনুমোদিত ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় না বিধায় স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে টাকার লেনদেন করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অনলাইন জুয়ায় যে টাকা কথিত উপার্জন হিসেবে দেখানো হয়, প্রকৃতপক্ষে তা কোন ব্যাংকিং বা অনুমোদিত আর্থিক চ্যানেলে উত্তোলন কিংবা জমা দেয়া অসম্ভব। প্রতারক জুয়াড়ি চক্র এজেন্ট ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকে। চক্রটি কৌশলে টাকার হাত বদল ঘটায় মাত্র। তবে এসব জুয়ায় অর্জিত টাকার কোন অস্তিত্ব অনুমোদিত আর্থিক চ্যানেলে পাওয়া যাবে না।

ঝিনাইদহ সরকারি কেশবচন্দ্র কলেজের সাবেক শিক্ষক ড. হাফিজুর রহমান জানান, তরুণ প্রজন্মকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি এ ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের ছোবল থেকে প্রজন্মকে বাঁচাতে প্রশাসনকে সোচ্চার হতে হবে। অভিভাবকসহ সকলের এসব বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম ছাড়া অর্থ উপার্জন কখনো সঠিক পন্থা হতে পারে না। অর্থ আয়ের ব্যাপারে সবারই একটা মোহ থাকে। এই মোহ থেকে চটকদার অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে যুবকরা।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন জুয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় কাউকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি, নানামুখী অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এ ধরনের প্রতারণা ও প্রতারক চক্রের সাথে জড়িতদের শনাক্তকরণে আমাদের বিভিন্ন টিম সক্রিয় রয়েছে।

জেলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের ইনচার্জ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের স্বাধীনতা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে নানান রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। অনলাইন জুয়া তেমনই একটি অপরাধ। এর রোধে সচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, এ ধরণের অনলাইন জুয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তারা নির্ভয়ে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ আইনগত সুবিধা দেবো। অভিযোগ জানানো নিয়ে সংকোচ বা সংশয় থাকা উচিত নয়। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এ বিষয়টি নিয়ে তৎপর রয়েছে।