
জলজট নিরসন, মশা নিয়ন্ত্রণ, দখল হওয়া রাস্তা-ফুটপাত, মাঠ, খাল, উদ্ধারসহ নাগরিক সেবা নিশ্চিতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে সমস্যা জানতে প্রতিটি ওয়ার্ডে গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। নগর ঢেলে সাজাতে রাস্তা-ড্রেন সংস্কার, খাল পরিষ্কার, শহরে নিরাপদ অটোরিকশা নামানোর মতো একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর সেবা সহজীকরণে এবং ভোগান্তি দূরীকরণে গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছি। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকমতো কাজ করবে না তাদের ঘুম হারাম করে দেব। ঢাকায় যে ভৌত অবকাঠামো করা হয়েছে সেগুলো পরিকল্পনাবিহীন। ঢাকা সিটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু। মাঝখানে তিমি মাছের পেটের মতো। খালগুলো সব পূর্ব-পশ্চিমমুখী। জলবিদ্যা মেনে ঢাকার উন্নয়ন হয়নি। এখানে যে যার মতো উন্নয়ন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনসিসির নতুন ও পুরোনো এলাকাগুলোর মধ্যে মূল কিছু পার্থক্য রয়েছে। পুরোনো এলাকার রাস্তা ও ড্রেনসহ অন্যান্য উন্নয়ন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে মাঠ, পার্ক ও ফুটপাত এসব দখল। আমরা এগুলো দখলমুক্ত করতে কাজ করছি। আর ডিএনসিসির নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত এগুলো নির্মাণ করতে হবে। নতুন ওয়ার্ডগুলোকে পরিকল্পনা করে সাজানো হবে। কোনো বৈষম্য হবে না নতুন ওয়ার্ডগুলোতে। নতুন নগরায়ণ হবে পরিকল্পিতভাবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ থেকে অঞ্চল-৭ পর্যন্ত সব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অঞ্চল-৮, ৯ ও ১০ এর ওয়ার্ডগুলোতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা গণশুনানিতে অবৈধভাবে গেট নির্মাণ করায় তাদের যাতায়াতে সমস্যা হয় বলে প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ যাচাই করে সত্যতা মিললে অভিযানে নামে ডিএনসিসি। গত ২৪ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রূপনগর আবাসিক এলাকার বিভিন্ন রোডে অবৈধভাবে নির্মিত আটটি গেট উচ্ছেদ করে ডিএনসিসি। এ সময় ফুটপাত ও রাস্তার প্রায় শতাধিক অবৈধ দোকান এবং হকার উচ্ছেদ করে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা-ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালে পানিপ্রবাহ, ফুটপাত দখলমুক্ত, মশক নিধনসহ জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ডিএনসিসিকে আন্তরিক হলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত হবে। ডিএনসিসি কাজ শুরু করেছে, আশা করি তারা মাঠগুলো দখলমুক্ত করতে আরও আন্তরিক হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ডেঙ্গুজ্বরের কারণে প্রাণ হারায় প্রচুর মানুষ। গত বছর ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ২৫৪ জন, মারা গেছে ১০৪ জন। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এডিস মশার থাবায় স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব হলেও বাগে আসছে না মশা। তাই এ বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে ডিএনসিসি। এ বছর মশক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে। মশা নিয়ন্ত্রণে হটস্পট চিহ্নিত করে বসানো হচ্ছে আধুনিক ফাঁদ। সরেজমিন ডিএনসিসি এলাকা ঘুরে সমস্যা চিহ্নিত করছেন প্রশাসক। দ্রুত সমাধান করা যাবে এমন সমস্যাগুলো তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষা এলে রাজধানীর বেশ কিছু পয়েন্টে তীব্র জলজট দেখা দেয়। তখন তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নিলেও স্থায়ী সমাধান মেলে না। খালগুলো দখল-দূষণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি যাওয়ার জায়গা না পেয়ে শহর প্লাবিত করে। তাই খালে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ডিএনসিসির আওতাধীন বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি এ চারটি খাল উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরেজমিন বাউনিয়া খালে গিয়ে দেখা যায়, খাল থেকে আবর্জনা তুলে পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আবর্জনার স্তূপে প্লাস্টিকের বোতল, ফ্রিজের ভাঙা অংশ, সোফার ফোম কী নেই। এসব ময়লা টেনে তোলায় বেশ খানিকটা প্রশস্ত হয়েছে খাল। পাশে দাঁড়িয়ে খাল পরিষ্কার কার্যক্রম দেখছিলেন এই এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। এ এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, ময়লা আবর্জনায় মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল খাল। দুর্গন্ধে নাকে কাপড় চেপে যাতায়াত করতে হতো খালপাড় দিয়ে। মশার আবাসস্থল হয়ে উঠেছিল খাল। খাল খনন করার ফলে এখন চেহারা বদলে গেছে। বৃষ্টি হলে পানির রংও পরিষ্কার হয়ে যাবে।’