
গ্রীষ্মের শুরুতেই বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। তবে রাজধানীতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা কম হলেও গ্রামের কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং করার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে। তিনি বলেন, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। শহর এবং গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং করা হবে।
এদিকে চলতি বছর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হলেও সরকার পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। ঈদের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহে স্বস্তি থাকলেও নানা ইস্যুর কারণে সামনে লোডশেডিং বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) জানিয়েছে, ঈদের সময় লোডশেডিং প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। তবে কিছু এলাকায় কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। নানা আশঙ্কা আর জটিলতার মধ্যেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দেশের বিভিন্ন জেলায় খবর নিয়ে জানা যায়, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের সুভাঢ্যা ইউনিয়নের আমিন পাড়া এলাকা ও ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকার কিছু জায়গায় লোডশেডিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার বালসাবাড়ি, দাতপুর, বাবলাপাড়া, পাইকপাড়া, ইসলামপুর গ্রামে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ফেনী জেলার দাগনভূঁঞা থানার ওমরপুর গ্রামের এক গ্রাহক জানান, ২১শে এপ্রিল বিদ্যুৎ চলে যায় সকাল ৯টায়। আসে বিকাল চারটায়। এই হচ্ছে লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি।
রংপুর বিভাগে সমপ্রতি বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তীব্র লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা দিনে ১,০৫০ থেকে ১,১০০ মেগাওয়াট হলেও জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭০০ মেগাওয়াটের মতো। ময়মনসিংহ, কুমিল্লায়ও লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
চলতি বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সে অনুযায়ী ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনেরই চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তবে পিডিবি সূত্রে জানা যায়, এপ্রিলে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে সেই হিসেবে তা ভরা গ্রীষ্ম মৌসুমে একই বা কিছু বেশি বা কম হতে পারে। এ হিসাবে লোডশেডিং হতে পারে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াটের।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এতে ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের লোডশেডিং হতে পারে। গরম যত বাড়বে, এসির ব্যবহার তত বাড়বে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিদ্যুতের সংকট।
লোডশেডিং হচ্ছে ও হবে: লোডশেডিং করার বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে। তিনি বলেন, চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। শহর এবং গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং করা হবে। রোববার সচিবালয়ে খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান। লোডশেডিং নিয়ে অনেকে ভুল তথ্য দেয় জানিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমি অস্বীকার করছি না, লোডশেডিং করা হচ্ছে। লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে। এনএলডিসি (ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার) ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো থেকে লোডশেডিংয়ের প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তারা কতোটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছে আর তাদের চাহিদা কতো, একটা হিসাব করলেই লোডশেডিং হচ্ছে কিনা পাওয়া যাবে। আমি অনেক জায়গায় গিয়ে দেখেছি যে লোডশেডিং নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে আপনার বাড়িতে বিদ্যুৎ না-ও থাকতে পারে। ট্রান্সমিটার নষ্ট থাকতে পারে। গত সরকারের আমলে নিম্নমানের পণ্য কিনেছে, এজন্য এগুলো বেশি হচ্ছে। আমি অস্বীকার করছি না লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিং হচ্ছে এবং হবে। শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, শহর এবং গ্রামে আলাদা করে লোডশেডিং করা হবে না।
আমরা পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছি, লোডশেডিং সমানভাবে করতে হবে। ফাওজুল কবির খান বলেন, আমরা এখন সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। চাহিদা তো আরও বাড়বে। মূলত তাপমাত্রার ওপর এটি নির্ভর করছে। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত যেতে পারে। আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এখন পুরোদমে চালাচ্ছি না, যখন চাহিদা বাড়বে তখন সেগুলো আরও চালানো হবে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আরও বলেন, লোডশেডিং আমরা সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করবো। শহর এবং গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং সমানভাবে বণ্টনের চেষ্টা করবো। বিষয়টি আমি আজ থেকে ব্যক্তিগতভাবে মনিটর করবো। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে কী পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে, সে তথ্য তাকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা। বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার জন্য সরকার ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি হয়েছে। এখন আমরা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দুটি স্থানে এটা করছি। একটি ঈশ্বরদীতে ৩০ মেগাওয়াট আরেকটি ভুলতায় ৯০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের স্ট্যাবিলিটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।