
বাংলাদেশের যে ক’টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার রয়েছে, তার মধ্যে দ্বীপ দেশ-খ্যাত মরিশাস অন্যতম। দেশটিতে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকার মধ্যে একদিন হঠাৎ করেই শ্রমবাজারটি বন্ধের ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। এরপর প্রায় তিনটি বছর কেটে গেছে। কিন্তু অদ্যাবধি দেশটির সরকারের সাথে আলোচনা করে শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এমন অভিযোগ করে অভিবাসন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়াই (সাবেক) ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন বাংলাদেশী একটি সিন্ডিকেটের আমন্ত্রণে মরিশাসে আমোদ ফুর্তিতে লিপ্ত হয়েছিলেন। মরিশাসের ওই চিহ্নিত সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে ব্যবহার করে হাইকমিশনকে জিম্মি করা, ভিসা জালিয়াতি থেকে শুরু করে স্থানীয়ভাবে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এর প্রভাব পড়ে গিয়ে শ্রমবাজারের ওপর। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভিসায় পাড়ি জমানো শ্রমিকরা (নারী-পুরুষ) নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়লে মরিশাস সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে বাংলাদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। তবে মরিশাস সরকার কী কারণে শ্রমবাজারটি বন্ধ করেছে সেব্যাপারে কোনো কিছু জানায়নি।
বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ থাকার নেপথ্যে কী লুকিয়ে আছে এবং কেন খুলছে না, তা জানতে গতকাল সন্ধ্যায় মরিশাসের পোর্ট লুইসে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. জকি আহাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। পরে অবশ্য তিনি এক ক্ষুদে বার্তায় জানান, দুঃখিত, ‘আমি এমন একটা জায়গায় আছি, যেখানে কিছু বাংলাদেশী দুঘর্টনার শিকার হয়েছেন।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মরিশাস সরকার কোনো কারণ ছাড়াই তিন বছর আগে হঠাৎ শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয়। জনশক্তি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সম্ভবনাময় এ শ্রমবাজারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলেও মন্ত্রণালয় বা দূতাবাসের কোনো উদ্যোগ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। যার কারণে কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আব্দুর রহমান নামের একজন দূতাবাসের উদ্দেশ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এইটা ছাড়া (হাইকমিশনের নিয়মিত অনুষ্ঠান) আর কোনো কাজ আছে আপনাদের? কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে, শ্রমবাজার প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ। কী করছেন আপনারা? শুধু চেষ্টা করে যাচ্ছি বলেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। কিসের কচু চেষ্টা করছেন? শ্রমবাজার চালু করতে না পারলে রিজাইন করুন। নতুনদের সুযোগ দিন।’
গতকাল মরিশাস থেকে জনৈক বাংলাদেশী নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, মরিশাসে আসার পর বাংলাদেশীদের মধ্যে এক শ্রেণীর কর্মী নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে কিছু বাংলাদেশী মরিশাসের মেয়েদের বিয়ে করতে শুরু করেন। এটা মরিশাস সরকার ভালোভাবে নেয়নি। এছাড়া শ্রমিকরা যে কোম্পানির নামে আসছে সেখানে না থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কোম্পানিতে গিয়ে কাজ করছে। এ বিষয়টিও তারা ভালোভাবে নিতে পারেননি। তা ছাড়া ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানার পরই তারা সিরিয়াস হয় এবং বাংলাদেশীদের কর্মীদের নামে ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ করে দেয়।
জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে মরিশাসের শ্রমবাজারটি খোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ হাইকমিশন পোর্ট লুইসে গত ১৯ এপ্রিল ই- পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মরিশাসের বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. জকি আহাদ। বিশেষ উপস্থিত ছিলেন লে: কর্নেল মোহাম্মদ মনজুর-ই-এলাহি, উপপ্রকল্প পরিচালক, ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হাইকমিশনের প্রথম সচিব (শ্রম) মো: আসাদুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশনার ড. জকি আহাদ বলেন, ই-পাসপোর্ট সেবা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে মরিশাসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজতর হবে এবং আমাদের নাগরিকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।