
‘গাজা’—এই নাম উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধ্বংস, রক্তপাত, ক্ষুধা ও নিপীড়নের এক ভয়াবহ চিত্র। প্রতিদিন ইসরায়েলি আগ্রাসনে উপত্যকায় প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। খাবারের অভাব এতটাই তীব্র যে ত্রাণ সংগ্রহের সময় পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হচ্ছেন নিরীহ গাজাবাসী।
এই মর্মান্তিক অবস্থা কেবল গাজার সীমার মধ্যেই আবদ্ধ থাকেনি, নাড়া দিয়ে উঠেছে সারা বিশ্বের বিবেককে। বহু দেশে রাজপথে নেমে আসছেন সাধারণ মানুষ। বলছেন, “নির্বিচার অত্যাচার চলছে, যা এখন সহ্যসীমার বাইরে।” তারা গাজার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন, প্রকাশ করছেন ক্ষোভ—দাবি জানাচ্ছেন অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের।
প্লেটে চামচের শব্দে প্রতিবাদ লন্ডনে
বৃটেনের রাজধানী লন্ডনের রাস্তায় গাজার জন্য দেখা গেল এক অভিনব প্রতিবাদ। মানুষ প্লেটের উপর চামচের বাড়ি দিয়ে প্রকাশ করলেন তাদের ক্ষোভ। প্রতীকীভাবে জানালেন—“ত্রাণ নিতে যাওয়া গাজাবাসীর উপর গুলিবর্ষণ বন্ধ করো।”
একজন আন্দোলনকারী বলেন, “আমি গণহত্যার বিরুদ্ধে। তাই এখানে এসেছি। এটাই আমার মূল্যবোধ। চুপচাপ বসে থাকা যায় না। আমরা বাসনকোসন এনেছি, শব্দ করেছি—এই বার্তা দিতেই যে গাজাকে অনাহারে রেখো না, ত্রাণ ঢুকতে দাও।”
আরেকজন বলেন, “জল অনেকদূর গড়িয়েছে। গাজার শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, এটা ভয়ঙ্কর। প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে—এটা কোনো যুদ্ধ নয়, এটা হত্যাযজ্ঞ, যা এখনই থামা দরকার।”
ইয়েমেনে মহাসমাবেশ: “আমরা পিছু হটবো না”
শুক্রবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। পুরো প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় শ্লোগানে শ্লোগানে। ফিলিস্তিন ছাড়াও দেখা যায় ইরান, লেবাননসহ বিভিন্ন মিত্র দেশের পতাকা। অস্ত্র উঁচিয়ে তারা গাজার পাশে থাকার শপথ নেন।
একজন বলেন, “ফিলিস্তিনি ভাইদের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমেছি। কোনোভাবেই নমনীয় হবো না, পিছু হটবো না, ক্লান্ত হবো না, ভয়ও পাবো না। পর্বতের মত অটল থাকবে ইয়েমেন। কারণ ইহুদিরা পুরো ফিলিস্তিন জাতি ও ভূখণ্ডের পবিত্রতা ধ্বংস করতে চায়।”
লেবানন, চিলি—বিশ্বজুড়ে গাজার জন্য জেগে ওঠা
লেবাননের রাস্তায়ও বিক্ষোভে নামে হাজারো মানুষ। কেফায়া জড়িয়ে তারা তোলেন গাজার মুক্তির দাবি। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে অভিনব উপায়ে সংহতি জানায় মানুষ। সারি সারি চলমান গাড়িতে ওড়ানো হয় ফিলিস্তিনের পতাকা। সান্তিয়াগোর রাস্তায় মুখর হয় প্রতিবাদী স্লোগানে।
বিশ্বের এই প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে, গাজার প্রতি সহানুভূতি এখন কেবল মধ্যপ্রাচ্যের কোনো সংকীর্ণতার বিষয় নয়। এটি একটি গ্লোবাল কনসার্ন—একটি মানবিক দায়। মানুষের বিবেক জেগেছে, প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিয়েছে প্লেটের চামচেও, পতাকাতেও, চোখের জলে, কণ্ঠের প্রতিধ্বনিতে।