
আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কোন মাসে নির্বাচন আয়োজন করা ভালো হবে তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ‘সুবিধাজনক সময়’ হিসেবে ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারির কথা বলা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জানিয়েছেন এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই প্রয়াসকে প্রাধান্য দিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য বারবার বলা হচ্ছে নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দিতে হবে। আর জামায়াতে ইসলামী বলছে, নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন দিতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের দল এনসিপির পক্ষ থেকে আবার বলা হচ্ছে গণহত্যার বিচার ও সংস্কার ছাড়া তারা নির্বাচন চান না।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ, এম, এ, নাসির উদ্দীন বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকবে না নির্বাচন কমিশন। নিজেদের ক্ষমতার মধ্যে যা যা আছে তা নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। রাজনৈতিক বিষয়ে উদ্যোগ নেবে ঐক্যমত কমিশন। সে নিয়ে কথা বলতে চায় না ইসি। তবে ভোটের প্রস্তুতিতে নির্বাচনের আগে যা যা করা দরকার নিজেদের ক্ষমতাবলে সেসব কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
সিইসি জানান, নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশনের কেনাকাটার কাজ শুরু হয়েছে। কিছু আসনের সীমানা নির্ধারণে আইন পরিবর্তন দরকার। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসলে কাজ শুরু হবে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদনেরও সময় বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতিতে অন্যান্য কাজ শুরু করেছে কমিশন।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সংসদ নির্বাচন কবে হলে ভালো হয় তা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখা। ওই প্রতিবেদন তৈরির কাজে জড়িত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে জানান, কমিশন জানতে চেয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত কোন মাসে কী কী ইভেন্ট আছে। কোন মাসে ভোট আয়োজন হলে সুবিধা, আর কোন মাসে কী কী অসুবিধা?
এর জবাবে ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের সুবিধা-অসুবিধা জানিয়েছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট শাখা। ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি সুবিধাজনক সময় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্চে রোজা ও ঈদ, এপ্রিলে পাবলিক পরীক্ষা, পরের দুই মাস বৃষ্টি, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হওয়ার কারণে মধ্য ফেব্রুয়ারির পর নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবকিছু নির্ভর করবে সদিচ্ছার ওপর। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নির্বাচন চান নাকি চান না। যদি না চান তাহলে হাজারটা অজুহাত দাঁড় করাতে পারবেন। রোজার মধ্যে যুদ্ধও করা যায়। আর ভোটটা তো একদিনের বিষয়, একদিনেই শেষ।
তিনি বলেন, আমি দেখলাম নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। এখন ফাইনালি ঐকমত্য কমিশন কী সিদ্ধান্ত দেয়, সেটার ওপর নির্ভর করছে। এ ছাড়া গণভোটেরও প্রয়োজন হতে পারে।
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ আরও বলেন, এখানে আরেকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের গুরুত্ব রয়েছে। দলগুলো এখনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বর্তমানে মাঠের রাজনীতির প্রধান দল বিএনপি বিদ্যমান ব্যবস্থা অটুট রাখতে চায়। আবার জামায়াত ইসলামী চাচ্ছে ভিন্ন ব্যবস্থা। এখন নির্বাচন পদ্ধতি যদি নিশ্চিত করা না যায় বা ঐক্যমত্যে না পৌঁছায় তাহলে তো মুশকিল হয়ে যাবে। বিষয়টা সহজ-সরল নয়, পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় না নিয়ে সরল অঙ্কের মতো যদি নির্বাচন কমিশন কারও প্রেসক্রিপশনে যায়, তাহলে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
কোন মাসে নির্বাচন করলে সবচেয়ে ভালো হবে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে সুইটেবল সময় নভেম্বর। এই সময়ে শীত থাকলেও তুলনামূলক কম থাকে। বৃষ্টির কোনো সম্ভবনা নেই। নানা কারণে নভেম্বর হবে সবচেয়ে সহায়ক সময়। এখন যারা সরকারে আছে, তারা যদি সরকারে থাকাটাকে লাভজনক মনে করে তাহলে তো তারা নির্বাচন চাইবে না। আমরা যদি এই সত্য কথাটা না বলি, তাহলে আমাদেরও দায় নিতে হবে। এ ছাড়া জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ভোট করতে চাইলে জানুয়ারি হবে সবচেয়ে ভালো সময়।
এপ্রিল-মে’তে ঘুর্ণিঝড় বেশি হয় : আবহাওয়াবিদ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাধারণত এপ্রিল ও মে মাসে ঘূর্ণিঝড় বেশি থাকে। জুন মাসের প্রথম দিকেও এই সম্ভবনা থাকে। তবে জুন মাসে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে এই সময়ে ফ্ল্যাশ আকারে বন্যাও হয়।