
টেকসই ও স্থায়ী বিনিয়োগ টানতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হতে পারে, যা বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আজ শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
‘বিদেশি বিনিয়োগ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিডার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে’ বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনার একটি চিত্র উঠে এলেও প্রত্যাশিত পরিমাণে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়; তবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকলে দেশ থাইল্যান্ডের বর্তমান অবস্থানের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হতে পারে।
সিপিডির বিশেষ ফেলো আরও বলেন, অতীতের সরকারের সময় বিনিয়োগ পরিসংখ্যানে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যেখানে ৩৩ বিলিয়ন ডলার এফডিআই (বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, বাস্তবে তা ছিল মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে ভিয়েতনামের এফডিআই বর্তমানে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের পরিমাণ মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার।
তিনি আরো বলেন, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সম্ভাব্য প্রভাবও বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে বড় বড় প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের হার খুবই কম। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করতে হবে জানিয়ে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ দশ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশ্বাসযোগ্যতা, নীতি ধারাবাহিকতা, বিনিয়োগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারী তাঁর বিনিয়োগের পুঁজি ও মুনাফা ফেরত নিতে কোনো শঙ্কায় না থাকে।
এ ছাড়া শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, উন্নত অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, লাইসেন্সপ্রাপ্তি সহজকরণ, ন্যায্যমূল্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বিনিয়োগসেবা নিশ্চিত করাসহ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা; রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা দূর করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা; দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি ট্যাক্স, শুল্ক ছাড় আকর্ষণীয় করা এবং শিক্ষার মান বাড়িয়ে শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে দক্ষ শ্রমিক ও উপযুক্ত ব্যবস্থাপক তৈরি করা কথাও সুপারিশে তুলে ধরা হয়েছে।