Image description
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলা

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। গত মঙ্গলবার পেহেলগাম উপত্যকায় বন্দুক হামলার পর এ ঘটনার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয় নয়াদিল্লি। পানি চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ, কূটনীতিক বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নেয় মোদির প্রশাসন। জবাবে আকাশসীমা বন্ধসহ একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে ইসলামাবাদ। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হামলাকারীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত’ তাড়া করে খুঁজে বের করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। পাকিস্তানও উপযুক্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মিসাইল ধ্বংসের পরীক্ষা চালিয়েছে দিল্লি। আর পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনা কতটা গড়াতে পারে—বিবিসির এক বিশ্লেষণে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার যে রক্তপাত ঘটল, সেটি ২০১৯ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কাশ্মীরে সংঘটিত সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা। হামলায় অন্তত ২৬ পর্যটক নিহত হয়েছেন। হামলায় হতাহতের শিকার ব্যক্তিরা সেনাসদস্য বা সরকারি কর্মকর্তা নন। সেই দিক থেকে এ হামলা নিষ্ঠুর ও প্রতীকী উভয়ই। এটি শুধু মানুষের জীবন লক্ষ্য করেই চালানো হয়নি; বিতর্কিত অঞ্চলটিতে ভারত যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করার ভঙ্গুর ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করছে, তার ওপরও একটি পরিকল্পিত আক্রমণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই এর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে। তবে উভয়ে আলাদাভাবে কাশ্মীরের দুই অংশ শাসন করে। সর্বশেষ হামলায় ভারতের জবাব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে অনেকটাই অভ্যন্তরীণ চাপের ওপর।

এরই মধ্যে দিল্লি ত্বরিতগতিতে প্রতিশোধমূলক একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ পানি ভাগাভাগির চুক্তি স্থগিত করা এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বক্তব্য। তিনি শুধু অপরাধীদের বিরুদ্ধে নয়; ভারতীয় মাটিতে ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখাবে কি না, সেটি প্রশ্ন নয়; বরং প্রশ্ন হলো, কবে ও কীভাবে এটি হবে এবং এর মূল্য কতটা হতে পারে। সামরিকবিষয়ক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত একটা জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখতে চলেছি। এটি অভ্যন্তরীণ দর্শক ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়—উভয়ের জন্য একটা ইঙ্গিত দেয়। ২০১৬ সাল থেকে বিশেষ করে ২০১৯ সালের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের ধরন হয়ে উঠেছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করা বা বিমান হামলা চালানো।’ তিনি বলেন, ‘(ভারত) সরকারের তরফে এখন এর নিচে পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হবে। পাকিস্তান সম্ভবত আগের মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবে। ঝুঁকির বিষয় হলো, সর্বদাই উভয় পক্ষের ভুল হিসাবনিকাশ।’

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উরি হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি ‘নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)’ নামে পরিচিত কার্যত সীমান্তে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে আক্রমণ চালায়। ভারতের দাবি, তারা এ অভিযানে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘাঁটি নিশানা করেছে। আবার ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় হামলায় আধা সামরিক বাহিনীর অন্তত ৪০ সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে কথিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের এতটা ভেতরে এমন হামলার ঘটনা এটাই প্রথম। পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানও। পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারতীয় এক বিমানচালককে আটক করে পাকিস্তান। দুই পক্ষই শক্তির মহড়া দেখায়, কিন্তু পুরোদমে যুদ্ধ এড়িয়ে যায়।

এ ঘটনার দুই বছর পর ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এরপর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিকবার সশস্ত্র হামলা হলেও যুদ্ধবিরতি অনেকটাই টিকে ছিল।

পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, সাম্প্রতিক এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।’ কুগেলম্যান বলেন, ‘ভারতের জন্য এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হবে রাজনৈতিক। কেননা, ওই হামলার কঠোর জবাব দিতে ভারতের ওপর জনগণের বড় ধরনের চাপ আসবে।’

বিশ্লেষক কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া দেখানোর আরেকটি সুবিধা, ভারত যদি সফলভাবে সন্ত্রাসীদের নিশানা বানাতে পারে, তবে তা তার প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে ও ভারতবিরোধী হুমকি হ্রাস করবে। আর অসুবিধা হলো, প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ গুরুতর সংকট এবং এমনকি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।’

ভারতের সামনে বিকল্প কী

গোপন অভিযানে দায় অস্বীকার করার সুযোগ থাকে। তবে তা প্রতিরোধ-সক্ষমতা দৃশ্যমানভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা, সেটি মেটাতে পারে না। এমনটাই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি। তিনি বলেন, ভারতের সামনে দুটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে।

সাম্প্রতিকতম এ হামলায় ভারতীয় বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করায় ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ‘নয়াদিল্লি যদি এর সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকাকে ধরে নেয় বা অনুমান করে, তবে ভারতের তরফে সামরিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে।’

প্রথমত, ২০২১ সালে নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতি ফিকে হয়ে এসেছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তঃসীমান্তে গোলাগুলি শুরু করার সবুজ সংকেত দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ২০১৯ সালের মতো বিমান হামলা বা প্রচলিত ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আক্রমণ চালানোর বিষয়ও আলোচনার টেবিলে আছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক রাজনীতি বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ক্ল্যারি আরও বলেন, ‘কোনো পথই ঝুঁকির বাইরে নয়। যুক্তরাষ্ট্র এখন নানা বিষয়ে ব্যস্ত এবং কোনো সংকট দেখা দিলে (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) তাতে দেশটি সাহায্য করতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে বা তারা সে অবস্থায় নাও থাকতে পারে।’

ভারত-পাকিস্তানের যে কোনো সংকটে সবচেয়ে গুরুতর ঝুঁকিগুলোর একটি উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। এ বাস্তবতা প্রতিটি সিদ্ধান্তের ওপর দীর্ঘ প্রভাব ফেলে, তা শুধু সামরিক কৌশলেই নয়; বরং রাজনৈতিক হিসাবনিকাশেও।

রাঘবন বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র একদিকে যেমন বিপজ্জনক, অন্যদিকে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলকও। এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী উভয়পক্ষকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য করে। সে ক্ষেত্রে (ভারতের) যে কোনো প্রতিক্রিয়া হবে সম্ভবত নির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক। পাকিস্তানও পাল্টা জবাব দিতে এবং পরে উত্তেজনা মেটাতে চাইতে পারে।’

কুগেলম্যান বলেন, পুলওয়ামা ঘটনার অন্যতম শিক্ষা হলো, উভয় দেশ (সংকটে) সীমিত প্রতিক্রিয়ার মধ্যে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হোসেইন হক্কানি মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুপক্ষের মধ্যে (সামরিক) উত্তেজনা বাড়তে পারে। ভারতও ২০১৬ সালের মতো চালাতে পারে সীমিত পর্যায়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’।

হক্কানি বলেন, ‘ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের হামলার সুবিধা হলো, এগুলো সীমিত পরিসরে চালানো হয়; যেখানে পাকিস্তানের পাল্টা জবাব না দিলেও চলে। আর এতে ভারতও জনমনে এ বার্তা পাঠাতে পারে যে তারা জবাব দিয়েছে।’

‘তবে এমন হামলা পাকিস্তানকেও জবাব দিতে বাধ্য করতে পারে। তারা বলতে পারে, কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে’— বলেন হক্কানি।

ভারত যে পথই বেছে নিক, আর পাকিস্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখাক—এর প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে ঝুঁকির আশঙ্কা, রয়েছে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার হুমকি। সেইসঙ্গে কাশ্মীরের নাজুক শান্তি পিছলে সরে যেতে পারে আরও দূরে।

মোদির হুঁশিয়ারি

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামলাকারী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে এক সমাবেশে মোদি কাশ্মীরের পেহেলগামে নিহত ২৬ জনের স্মরণে হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন। তিনি উপস্থিত হাজারো মানুষকে নিহত ব্যক্তিদের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।

হামলাকারীদের পরিচয় বা পাকিস্তানের নামোল্লেখ না করে মোদি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করে খুঁজে বের করব।’

কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের এবং তাদের সহযোগীদের শাস্তি দিতে ভারত সব জায়গায় খুঁজে বের করবে। যদিও তিনি হামলাকারীদের পরিচয় বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি।

তবে মোদির এমন মন্তব্য পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ভারত বুধবার রাতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সংকুচিত করার পর। ওই দিন ভারত ছয় দশকের পুরোনো পানিচুক্তি স্থগিত এবং দুই দেশের একমাত্র স্থলসীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করাকে ‘জলযুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল বলে উল্লেখ করেছেন।

কাশ্মীর পুলিশের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে হামলার সঙ্গে জড়িত দাবি করে তিনজন সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম ও স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

পুলিশের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ তিনজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি নাগরিক। তবে কীভাবে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তা তারা উল্লেখ করেনি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বুধবার বলেন, মন্ত্রিসভা নিরাপত্তা কমিটিকে ওই হামলায় আন্তঃসীমান্ত সংযোগের বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা এসব সংযোগের কোনো প্রমাণ বা বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি।

মিশ্রি আরও বলেন, ইসলামাবাদ থেকে তাদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, ভারত নয়াদিল্লির পাকিস্তানি দূতাবাসের প্রধান কূটনীতিককে তলব করেছে। মিশ্রি ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর একটিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে থাকা সব প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতে সর্বদলীয় বৈঠক পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর করণীয় ঠিক করতে গতকাল দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। এতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ অন্য দলগুলো অংশ নেয়। বৈঠক শেষে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, হামলার ঘটনায় যে কোনো পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিরোধীরা।

আজ শ্রীনগরে যাচ্ছেন ভারতের সেনাপ্রধান জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতি সরেজমিন খতিয়ে দেখতে আজ শ্রীনগর যাচ্ছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সেখানে পদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করবেন।

সামরিক সূত্রের বরাতে ওই খবরে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে ১৫ কোর কমান্ডিং কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।

ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ নিল পাকিস্তান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক হয়। গতকাল ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এ বৈঠক হয়। এতে ভারতীয় পদক্ষেপের জবাবে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান বলেছে, ভারতের বেপরোয়া ও দায়িত্বহীন আচরণের, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলো এবং আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। পাকিস্তান ওয়াগা সীমান্ত চৌকি বন্ধ করছে।

ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব সার্ক ভিসা বাতিল করেছে পাকিস্তান। এই ভিসার আওতায় পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে নিযুক্ত দেশটির প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনে কর্মকর্তার সংখ্যা ৩০-এ নামিয়ে আনতে বলেছে পাকিস্তান। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে।

ভারতের মালিকানাধীন বা ভারত থেকে পরিচালিত সব বিমান পরিবহন সংস্থার জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। সেই সঙ্গে পাকিস্তান দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা

দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইর খবরে বলা হয়েছে, পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান করাচি উপকূলের অদূরে নিজস্ব ‘এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে’ ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুক্রবারের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।

মিসাইল ধ্বংসের পরীক্ষা চালাল ভারতীয় নৌবাহিনী

এমন উত্তেজনার মধ্যে গতকাল মিসাইল ধ্বংসের পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে নৌবাহিনী জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মিসাইল বিধ্বংসকারী আইএনএস সুরাত সফলভাবে সামুদ্রিক অঞ্চলে একটি দ্রুত ও নিচ দিয়ে উড়ে যাওয়া মিসাইল ধ্বংস করেছে। এর মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড জানিয়েছে, পাকিস্তানের নৌ কর্মকর্তারা করাচি উপকূলে তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সারফেস টু সারফেস মিসাইলের পরীক্ষা চালাবে, যা ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।

এদিকে পেহেলগামে হামলার জেরে ভারত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলোকে ‘শিশুসুলভ’ বলে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, আমরা ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এই জবাব কম হবে না।