Image description

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালী বলে জানা গেছে। ভারতের অন্যতম মনোরম এই উপত্যকায় ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন নিহতরা। এ হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তান পাল্টা পাল্টি একে অন্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এ ঘটনার জন্য ভারতের অনেক নাগরিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে দুষছেন।

হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হলেও ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের স্বল্প পরিচিত একটি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে ভারত মনে করছে, এই গোষ্ঠী আসলে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা বা এমনই অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের ছদ্মনাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে হামলার পরপরই পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, এর ‘কড়া ও স্পষ্ট জবাব’ দেওয়া হবে। অন্যদিকে এই হামলায় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। জঙ্গিদের কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা বলছে, কাশ্মীরিদের ‘স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে’ তারা নৈতিকভাবে সমর্থন করে।

এই ইস্যুতে আবারও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলার দায় একজন আরেকজনকে চাপাচ্ছে। হামলায় জড়িত নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই হামলার ঘটনায় ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতীয় নাগরিক সায়ক ঘোষ চৌধুরী। গত বুধবার কাশ্মীরে নিজের আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে সায়ক ঘোষ বলেন ‘পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করা হবে কি হবে না, আমার কাছে তুচ্ছ বিষয়। আমি সাধারণভাবে বিশ্বাস করি না, অমিত শাহ-অজিত দোভালদের সাহায্য ছাড়া কোনো অস্ত্র বা অস্ত্র চালানোর লোক কাশ্মীরে ঢুকতে পারে। আগে তবুও অনেক জায়গা ছিল যেখান দিয়ে জঙ্গী ঢোকার সুযোগ ছিল। এখন প্রযুক্তির উন্নতির পরে সেই সব জায়গা অতি সহজেই নজরদারি করা যায়। আর আমি কার্গিল যুদ্ধের পরে কাশ্মীরে গেছি। আমি কোনোদিন শুনিনি, পর্যটকদের জঙ্গীরা হত্যা করে।’

সায়ক ঘোষ চৌধুরী আরো লেখেন, ‘আমাকে মিলিটারি কমান্ডার বুঝিয়েছিলেন, জঙ্গীরাও পর্যটকদের আক্রমণ করে না। কাশ্মীর বেঁচে থাকে ট্যুরিজম এর ওপরে। ওদের টার্গেট আমরা। মানে কাশ্মীরের জঙ্গী আক্রমণের চরম পর্যায়তেও পর্যটকদের ওপরে আক্রমণের ঘটনা দেখিনি। আর পেহেলগাঁও-গুলমার্গ-শোনমার্গ মিলিটারি কভার এ মুড়ে রাখা হত। জঙ্গীরা কোন ধর্ম সেটা জিজ্ঞাসা করে হত্যা করছিল’, সেটাতেই বোঝা যায় যে প্ল্যানিং অনেক ওপর থেকে এসেছে। যদি পাকিস্তান দায়ী থাকে (বালোচিস্তানের বদলা), তাহলে পাকিস্তান থেকে লোকদের ঢুকতে দিয়েছে যে মোদি সরকার, তাদের দায় নিতে হবে বই কি ! ‘নরেন্দ্র মোদি জঙ্গি হামলা বন্ধ করে দিয়েছেন’-এই দাবিটা তাহলে মিথ্যা ছিল?’

ভারতীয় এই নাগরিকের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জয়েন্তা হালদার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘কেউ ভুলে যাবেন না, ভারত এখনো ব্রিটেনের ডোমিনিয়ান স্টেইট, আম বাগানের মাচায় মালিক নয় পাহারাদার বসানো হয়েছে।’ ভারতীয় নাগরিকের পোস্টকে সমর্থন জানিয়ে ব্যানার্জি তাপস লেখেন, ‘একশ ভাগ সহমত। আমার কথাটা বলে দিলেন।’

নেলেভো লেখেন, ‘জঙ্গি পাশের দেশ থেকে টপকে ঢুকেছে এটাই বা শিওর হচ্ছেন কী করে? প্রতিটা দেশেই সিøপার সেল মজুত থাকে সেই দেশের বাসিন্দার ছদ্মবেশে। এখন উন্নত টেকনোলজির যুগে কেউ পাশের দেশ থেকে আসার রিস্ক নেয় না’। মাসুম লাসকার লেখেন, ‘এটা কিছুই না দেশের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাঁধানোর চেষ্টা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কিছু উগ্রতা খেপে ওঠে আর সুবিধাবাদী নেতা গুলো যাতে গদিতে থাকে।’
এবি মান্নান নামের আরেক ব্যক্তি লেখেন, ‘কাশ্মীর হামলা সম্প‚র্ণ পরিকল্পিত। এবং এটা বর্তমান ভারত সরকারের যে ব্যর্থতা সেটা ঢাকার জন্য একটা অপচেষ্টা মাত্র’।

প্রসঙ্গত, ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করলেও তা তারা আংশিকভাবেই শাসন করে। জম্মু-কাশ্মীরের ‘বৈসরান’ এলাকাটিকে স্থানীয়রা ভালোবেসে বলেন ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’। এলাকাটি পেহেলগাম থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ওপরে অবস্থিত একটি মনোরম উপত্যকা। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে এই এলাকা ভরে ওঠে দেশি-বিদেশি পর্যটকে। সেখানেই হামলার ঘটনা ঘটেছে।