Image description
♦ মূল্যস্ফীতি না কমায় বাজেট ব্যয়ের লাগাম টানছে অন্তর্বর্তী সরকার ♦ মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ ♦ নিরুৎসাহ করা হচ্ছে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি ♦ নিতে হবে বিশেষ অনুমোদন ♦ প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ করা হলেও ব্যয় কমেনি

নতুন (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটেও ব্যয়সংকোচন নীতি বহাল রাখছে সরকার। এর আগে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারও টানা প্রায় পাঁচ বছর ব্যয়সংকোচন নীতিতে চলেছিল। তবু কমেনি মূল্যস্ফীতি। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রথম দিকে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও মার্চে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে রাজস্ব কাঙ্ক্ষিত হারে আদায় করতে না পারায় সরকারের বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। এজন্য আগামী বছরের বাজেটের আকার ছোট করা হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণে। এমনকি চলতি বছরের বাজেটের চেয়েও ছোট হতে পারে আগামী বাজেটের আকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরার তথ্যমতে, গত অর্থবছর মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অথচ সরকারের লক্ষ্য ছিল ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার। সবশেষ মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এদিকে আবারও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সরকারের ভিতরেও রয়েছে অর্থসংকট। সংকট এড়াতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ি কেনা বন্ধ করা হলেও ব্যয় কমেনি সরকারের। এজন্য অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আসা পর্যন্ত নতুন অর্থবছরজুড়েই চলমান থাকবে ব্যয়সংকোচন নীতি। এ সময় নিরুৎসাহ করা হচ্ছে বিলাসবহুল পণ্য আমদানি। আসছে ২ জুনের নতুন বাজেটেও এসব ঘোষণা থাকবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরও মূল্যস্ফীতির চাপ ৬ দশমিক ৫ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আরও কঠোর হচ্ছে সরকারের ব্যয়সংকোচন নীতি। অতি জরুরি ছাড়া পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা একটা অবাস্তব পরিকল্পনা। কেননা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। সামনে নির্বাচনের বছর। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কতটা সহনীয় রাখা যাবে তা নিয়ে সংশয় আছে। ফলে আসছে অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির জন্য যে লক্ষ্য সেট করা হচ্ছে তা মোটেও বাস্তব নয় বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তবে ব্যয়সংকোচন নীতির প্রশংসা করেছেন তিনি। এটাকে সফল করতে হলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ।

জানা গেছে, ব্যয়সংকোচন নীতি মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শেই বেছে নিয়েছিল সরকার। বিপর্যস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও রিজার্ভের অব্যাহত পতন ঠেকাতে সরকার এমন ব্যয়সংকোচন নীতি অনুসরণ করে আসছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে; যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। যদিও রিজার্ভের অব্যাহত পতন ঠেকানো গেছে। সবশেষ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে দীর্ঘদিন পর। এদিকে ওয়াশিংটনে শুরু হওয়া আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন সভায় বলা হয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশ সরকার আমদানি খাতের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। কিন্তু সেটা খুব একটা কার্যকর নয়। এতে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই আর্থিক খাতের চলমান সংস্কারগুলো কার্যকরভাবে দ্রুত সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার সংকট সমাধানের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। এর কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় কমেনি। এজন্য জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। তারও আগে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থ পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বাজারব্যবস্থা এবং আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।