Image description

সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা অবিলম্বে জাতির সামনে প্রকাশ করে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টি এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক শেষে এ আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে সংস্কারের জন্য অপেক্ষা নয়। নির্বাচন হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকারের মাধ্যমে একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা। এটা জনগণের ম্যান্ডেট, জনগণের মালিকানার বিষয়। আর সংস্কার হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের পরে আরও বহু সংস্কার হতে থাকে। আগামী বছরগুলোতেও সংস্কার হতে থাকবে। তারপরেও সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেটা জাতির সামনে প্রকাশ করলেই তো হয়ে যায়। প্রকাশ করে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে অসুবিধা কোথায়? ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবও তো বলেছেন, ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার হবে। সরকারকে বলব, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে, সেটা বলেন। শুধু বিএনপি না, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে তাদের সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। সুতরাং পরিষ্কার কথা, কোথায় ঐকমত্য হয়েছে- তা জাতিকে জানিয়ে দিয়ে সনদ সই করে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই।

এ সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, গতকাল (বুধবার) একটি দল বলেছে- বিএনপি নির্বাচন নির্বাচন করছে শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এর জবাবে তিনি বলেন, ভোটের জন্য নির্বাচন হবে, ভোটের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায়ও যাবে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা তো এটাই মনে করবে। ভোট হবে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সংসদে যাবে, ক্ষমতায় যাবে। এটাই তো গণতন্ত্র, এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার তো কোনো কারণ নেই।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য সবাই উদগ্রীব, সবাই ভোট দিতে প্রস্তুত। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। এখন গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের শক্তি অর্থাৎ কারা গণতন্ত্র চায় আর কারা চায় না, কারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার চায় আর কারা চায় না, এই বিষয়গুলোতে আমরা জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিই। বাংলাদেশের মানুষ তো বোকা না। তারা সবকিছু ফলো করছে, খেয়াল করছে।

এ সময় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি জাতির কাছে একটা ভুল মেসেজ দেওয়া হচ্ছে। সেটা হলো- বিএনপিসহ যুগপতের শরিকরা সংস্কার চায় না, তারা আগে নির্বাচন চান ক্ষমতায় যাবার জন্য। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল মেসেজ। আমরাই সর্বপ্রথম সংস্কারের কথা বলেছি, এ জন্য আরও দু’বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা দিয়েছি। এর মধ্যে সংস্কারের প্রায় সব বিষয়ই রয়েছে। যদি কোনো কিছু বাকি থাকে, আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন, আমাদেরকে বলতে পারেন। কিন্তু এটা নিয়ে জাতির কাছে ভুল মেসেজ দিবেন না। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার জন্য ভুল মেসেজ দিবেন না। এটা প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার কাছে অনুরোধ। যদি ৩১ দফায় কাভার না করে, তাহলে বলুন যে- এই এই জায়গায় আরও সংস্কার দরকার। পৃথিবীর শুরু থেকে সংস্কার শুরু হয়েছে। পৃথিবী ধ্বংসের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সংস্কার চলবে। সুতরাং সংস্কারের জন্য তো আমরা গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরতে পারি না।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এমনকি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিতে পারিনি। দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে এখনো যদি ভোট দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে আসলে দেশে কবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে? সেটাই আজ বড় প্রশ্ন।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের এই সমন্বয়ক বলেন, আমরা মনে করি, ডিসেম্বর মাসের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ হবে। আমাদের বর্তমান নির্বাচন কমিশনও মোটামুটি সব দিক থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। তারাসহ সবার সদিচ্ছা থাকলে, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব।

 

যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, তা জাতির সামনে প্রকাশ করুন : আমির খসরু

 

বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টির সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট বৈঠকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। বিএনপির পক্ষে আমির খসরু ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ছিলেন।