
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় এক যুগ পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচারকাজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১,১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন এবং ১,১৬৯ জন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হন। এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যামামলায় ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৯৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার ১২ বছর পূর্ণ হলো। বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী মাসুদা খাতুন। তিনি বলেন, "বিচার পাওয়ার আশায় এক যুগ অপেক্ষা করেছি, কিন্তু এখনো কারও শাস্তি হয়নি।"
ঢাকার জেলা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল হোসেন জানান, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ সবসময় সক্রিয়। তবে আহত-নিহত সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে সময় লাগছে।
মামলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, এ ঘটনায় মোট ২০টি মামলা হয়, যার মধ্যে তিনটি ফৌজদারি। একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ, অপর দুটি মামলা করে রাজউক ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে হত্যামামলায় ৩৮ জন আসামি রয়েছেন, এর মধ্যে কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা কারাগারে আছেন। তিন আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘ বিলম্বের পেছনে রয়েছে তদন্ত বিলম্ব, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ এবং ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অভাব। ২০১৬ সালে অভিযোগ গঠন হলেও সাত আসামি উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করলে পাঁচ বছর বিচারকাজ স্থগিত ছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
রানা প্লাজার নির্মাণে ত্রুটি এবং দুর্নীতির অভিযোগেও মামলা চলছে, তবে ইমারত আইনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে বন্ধ। ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাটি এখন বিচারিক পর্যায়ের শেষ ধাপে রয়েছে।
শ্রমিকনেত্রী কল্পনা আক্তার এই বিলম্বকে ‘আন্তরিকতার ঘাটতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অন্য কারখানাগুলোও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন থেকে গেছে। তিনি আশা করছেন, বর্তমান সরকার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।