
গত ৫৩ বছর ধরে শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের ঘাটতির কারণে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আমজনতার দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আলী রীয়াজ বলেন, গত ৫৩ বছর যাবত বাংলাদেশের শাসন কাঠামো একধরনের গণতন্ত্রের যে ঘাটতি আমরা লক্ষ্য করছি, প্রতিষ্ঠানের যে দুর্বলতা লক্ষ্য করেছি, তারই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে কারণে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যাতে করে আমাদের পুনর্বার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, পুনর্বার যাতে প্রাণ দিতে না হয়, পুনর্বার যেন গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মোকাবিলা করতে না হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্যের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথরেখা নির্মাণ করা যাবে।
তিনি বলেন, আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছি, তার নিপীড়ন মোকাবিলা করেছি সকলেই, প্রত্যেক নাগরিক, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলের বাইরে যারা তারা সকলেই মোকাবিলা করেছেন।
বাংলাদেশের পথরেখা নির্মাণের জন্য সবার চেষ্টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন কমিশন সহসভাপতি।
আমজনতার দলের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৩৮টিতে একমত, ১২টিতে দ্বিমত, ১৫টিতে আংশিকভাবে একমত এবং ১টিতে মতামত দেয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে আলী রীয়াজ বলেন, আপনাদের মতামতের অনেকক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশগুলোর বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। কিছু বিষয়ে ভিন্নমত আছে, কিছু বিষয়ে আংশিকভাবে একমত প্রকাশ করেছেন। যেসব বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। যেসব বিষয়ে ভিন্নমত আছে তা নিয়ে কথা বলব, আমাদের থেকে ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আপনাদের বক্তব্য শুনবো।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আমজনতার দলের সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিচ্ছেন।
গণপরিষদের (একাংশ) থেকে নাম পরিবর্তন করে আমজনতার দল করার কারণে সংলাপের প্রস্তুতি ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে সূচনা বক্তব্যে মিয়া মশিউজ্জামান বলেন, সে কারণে স্প্রেডশিটে দেয়া মতামতের কিছু পরিবর্তন হবে। এটা আপনাদের জন্য অসুবিধা হবে। আগের দেয়া মতামতের কয়েকটা জায়গায় পরিবর্তন চাই।
আজকের বৈঠকের সংবিধান, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চান বলে জানান মিয়া মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, আশা করি আমাদের আলাপ ফলপ্রসূ হবে। জাতির জন্য সুন্দর ভবিষ্যত রচনায় অবদান রাখতে পারব।