
আওয়ামী লীগ আমলে প্রশাসনের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় দলকানা কর্মকর্তাদের বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে তৎকালীন সরকার। এসব নিয়োগে কর্মকর্তাদের যোগ্যতা কিংবা দক্ষতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য এবং দুর্নীতি-অনিয়মের পারদর্শিতাকেই নেওয়া হয়েছে বিবেচনায়। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে নেওয়ার নজিরও রয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। বহু সমালোচনা ও কেলেঙ্কারির পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতা থামেনি। এর ফলে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা। তাদের অপ্রাপ্তির হতাশায় প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বৈষম্য।
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই বৈষম্য ঘুচবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি—সমাজের প্রতিটি স্তরে বৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও চুক্তির চক্কর থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বরং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই অবসরে যাওয়া ২২ কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। এ নিয়ে শুরুতেই আপত্তি তোলেন প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের আপত্তি ধোপে টেকেনি।
দেশের তৎকালীন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এসব নিয়োগ জরুরি বলে যৌক্তিকতা দেখান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক এ নিয়োগের ফলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভ এখনো নিরসন হয়নি। প্রকাশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ না খুললেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সচিবদের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি কমিয়ে চাকরিরত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার।
বিষয়টি নিয়ে কালবেলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকারের বয়স এখন প্রায় ৯ মাস। কর্মকর্তাদের মধ্যে কে যোগ্য কে অযোগ্য তা নিরূপণের জন্য এ সময় যথেষ্ট। এখন যোগ্যদের খুঁজে সচিব পদে দায়িত্ব দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট এক আদেশে সাবেক পাঁচ অতিরিক্ত সচিবকে দুই বছরের জন্য সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে নতুন করে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের রেওয়াজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই আদেশে ড. শেখ আব্দুর রশিদকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে, মো. এহছানুল হককে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে, ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে জননিরাপত্তা বিভাগে, ড. নাসিমুল গনিকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগে এবং এম এ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পাঁচ কর্মকর্তা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা এবং কয়েক বছর আগেই চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে যাবতীয় সুবিধাসহ তারা অবসরে গিয়েছিলেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধারা ওই পাঁচ কর্মকর্তায় আটকে থাকেনি।
সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে শুরু করে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ২২টি মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক সচিব বসিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চুক্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার বলা হচ্ছে, বিগত সরকারের আমলে এই কর্মকর্তারা বঞ্চিত ছিলেন। এ বক্তব্যের পক্ষে যারা; তারা বলছেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া সচিবরা আওয়ামী লীগের সময়ও এ পদে আসার জন্য যোগ্য ছিলেন; কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় তখন কপাল পুড়েছে তাদের। তাই তাদের প্রশাসনে ডেকে এনে সচিব করা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এমন দাবি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে অনেকেরই।
তারা বলছেন, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কেউ অবসরে গেলে তাকে বঞ্চিত বলা যায় না। আবার একটি অংশের মতে, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা বিগত সময়ে বঞ্চিত হয়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। গত কয়েক বছরে প্রশাসনের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড (প্রযুক্তি নির্ভর) হয়েছে। প্রশাসন অনেক অনেক আপডেট ( হালনাগাদ)। চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সচিবরা যেহেতু অনেক আগেই অবসরে গেছেন, তাই হালনাগাদ প্রশাসনের গতিপ্রকৃতি তাদের পক্ষে চট করে বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাজকর্মে জটিলতা ও স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।
আবার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সীমিত সময়ের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তা অনেকটা গা বাঁচিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন বলে মনে করেন প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সচিবরা তাদের দায়িত্বটিকে ধারণ করতে পারছেন না কিংবা করছেন না। কারণ তাদের কার্যক্রমে উদ্ভাবনী চিন্তা কিংবা উৎকর্ষ বৃদ্ধির কোনো চেষ্টা প্রতিফলিত হচ্ছে না। প্রশাসন নিয়ে বিশদভাবে চিন্তার সময়ও তাদের হাতে নেই।
কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, প্রশাসনে চালকের আসনে বসা সচিবরা প্রকৃতপক্ষে বিগত সময়ে বঞ্চিত ছিলেন না। সময়মতো পদোন্নতি পেয়েছিলেন। তবে হ্যাঁ, তাদের তখনকার সরকার চাইলে সচিব পদোন্নতি দিতে পারত। সেটি হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়নি আওয়ামী প্রশাসন। তারা আরও বলেন, কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ পদোন্নতি ‘অতিরিক্ত সচিব-ই’ ধরা হয়। সচিব পদটি অলিখিতভাবে ‘রাজনৈতিক পদ’। সরকার তার নিজ দলের অনুগত কর্মকর্তাদেরই সচিব বানায়। কিন্তু বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান আওয়ামী লীগের সময়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবেই অবসরে গিয়েছিলেন। তাদের সচিব করা হয়নি। এটিকে পুরোপুরি বঞ্চিত বলা যাবে না। আর বর্তমান মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যান। তার কর্ম দক্ষতা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
সাবেক একজন সচিব কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার দেশপ্রেম ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই। তিনি অন্যান্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনেও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তবে তার প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক অনেক সচিব নিয়োগ পেয়েছেন, যারা যুগ্ম সচিবের চেয়ে বড় পদে যাওয়ার যোগ্যতাই রাখেন না। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার কালবেলাকে বলেন, এই সরকার যে পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে, তাতে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ না দেওয়ার উপায় ছিল না। তবে যোগ্যতার বিচার কম হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও আঞ্চলিকতা বিবেচনা করে নিয়োগ দেওয়ায় ড. ইউনূসের প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারা মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে জনপ্রশাসন খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যোগ্য লোক বাছাই করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশাসনকে গতিশীল করতে কী করণীয়—জানতে চাইলে আব্দুল আউয়াল বলেন, কিউবাতে ফিদেল কাস্ট্রো তার প্রশাসনের কর্তাদের ডেকে বারবার সতর্ক করতেন। কাজের হিসাব চাইতেন। ড. ইউনূসও যদি তার চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তাদের ডেকে কথা বলেন—কাজের হিসাব চান এবং সংশোধন না হলে চুক্তি বাতিলের হুঁশিয়ারি দেন, তাহলে ভালো ফল আসবে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে কর্মকর্তারা যেন আপন মনে করে কাজ করেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
যেসব দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ গত ১৭ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। পরে ৮ অক্টোবর তাকে দুই বছরের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়। তার ছেড়ে আসা পদে সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান সিদ্দিক জোবায়ের। ২ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ পান ২০১৫ সালে যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া। একই বছরে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিব ড. মোখলেস উর রহমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হন। ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান ড. মো. নেয়ামত উল্যাহ ভূঁইয়া। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন এ এস এম সালেহ আহমেদ। ২২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ১৭ আগস্ট চুক্তিতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পান ড. নাসিমুল গনি।
৩০ ডিসেম্বর ড. কাইয়ুম আরা বেগমকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে সচিব মর্যাদায় এক বছরের চুক্তি দেওয়া হয়। মো. সরওয়ার আলমকে দুই বছরের চুক্তিতে সচিব ২৩ ডিসেম্বর সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব পদে বসানো হয়। ৫ ডিসেম্বর আখতার আহমেদকে দুই বছরের চুক্তিতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৩ নভেম্বর বেগম মমতাজ আহমেদকে দুই বছরের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ১০ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ পান মোহাম্মদ ইউসুফ। ২৫ নভেম্বর এ জে এম সালাহউদ্দিন নাগরী দুই বছরের জন্য ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) পদে নিয়োগ পান। ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান শীষ হায়দার চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি পিআরএল থেকে ফিরিয়ে এনে মো. আবু বকর ছিদ্দিককে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন ক্যাটাগরিতে কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক বছরের চুক্তিতে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) হন মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান পিআরএলে থাকা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিয়ে ৯ অক্টোবর আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী তিন বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। গত ২১ জানুয়ারি এক বছর মেয়াদের জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক ( গ্রেড-১) পদে চুক্তিতে নিয়োগ পান সালেহ আমদ মোজাফফর।
প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ ও বাতিল
চুক্তিভিত্তিক প্রতিটি নিয়োগের পেছনে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে নানা যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলেও কয়েক কর্মকর্তার জন্য প্রশ্নের মুখে কিংবা বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে সরকারকে। গত ২ অক্টোবর ইলাহী দাদ খান নামে একজনকে চুক্তিতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দেয় সরকার। পরে তাকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে এক দিন পরই তার নিয়োগাদেশ বাতিল করা হয়।
একইভাবে গত ১৫ এপ্রিল মুহাম্মদ আবু আবিদ নামে এক তরুণকে খণ্ডকালীন অবৈতনিক মুখপাত্র নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, মুহাম্মদ আবু আবিদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সরকারের কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অপপ্রচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আবু আবিদের সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের সখ্য ছিল—এমন অভিযোগের মুখে দুদিনের মধ্যেই আবিদের নিয়োগাদেশ বাতিল করে সরকার। এ দুটি ঘটনার পর এসব নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং বাস্তবায়নকারীদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।